বিশ্ব উষ্ণায়নের দাপট বোঝা যাচ্ছে হিমালয়েও। উষ্ণতার তারতম্যের কারণে দ্রুত গলে যাচ্ছে গঙ্গোত্রীর উপহিমবাহ চতুরঙ্গী। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ গলে যেতে পারে এই হিমবাহটি। এর প্রভাব এড়াতে পারবে না গঙ্গা এবং তার জের ধরে পদ্মায়। পানির স্তর বেড়ে গিয়ে বন্যা হতে পারে গাঙ্গেয় উপত্যকায়। সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে এমনই আশঙ্কা করা হয়েছে। উপগ্রহের থেকে পাওয়া ও কাইনেমেটিক জিপিএসের তথ্য বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন জি বি পন্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হিমালয়ান এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের (আইআইএসসি) সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্সের গবেষকরা। ১৯৮৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত উপগ্রহের পাঠানো তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে গঙ্গোত্রী থেকে ক্রমশ দূরে সরছে চতুরঙ্গী হিমবাহ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘কারেন্ট সায়েন্স জার্নাল’-এর ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত হবে গবেষণাপত্রটি।
গঙ্গোত্রীর থেকে বেশি উঁচু ও ছোট হওয়াতেই চতুরঙ্গী জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়েছে বলেই গবেষণায় প্রকাশ। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত গঙ্গোত্রী হিমবাহের সঙ্গে যুক্ত ছিল চতুরঙ্গী। বর্তমানে সেটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর গঙ্গোত্রী থেকে প্রায় ২২.৮ মিটার দূরে সরে যাচ্ছে চতুরঙ্গী। গবেষণা বলছে, ২০০৮ সালেই গঙ্গোত্রী হিমবাহ গলে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু তার গতি চতুরঙ্গীর থেকে অনেকটাই কম বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। বছরে ৯-১২ মিটার ছোট হয়ে যাচ্ছে গঙ্গোত্রী। একই উচ্চতায় থাকা অন্য হিমবাহগুলোও এর থেকে দ্রুত গতিতে গলছে বলেই জানিয়েছেন গবেষক হরিশ বিস্ত। এর জেরে গঙ্গায় পানির প্রবাহ বেড়ে গিয়ে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আইআইএসসি-র গবেষক প্রকাশচন্দ্র আর্যের মতে, ‘গঙ্গোত্রীর অনেকগুলো উপহিমবাহের মধ্যে প্রধান হল চতুরঙ্গী ও রক্তবরণ। দুই হিমবাহই অত্যন্ত দ্রুত হারে গলছে। ভবিষ্যতে এদের অস্তিত্ব থাকবে না। হিমালয়ের অন্যান্য বড় হিমবাহগুলো এদের তুলনায় আস্তে গলছে। হিমবাহগুলোর গলা পানির কারণে গঙ্গার পানির স্তর নিশ্চিতভাবে বাড়বে।
নাসার ল্যান্ড ইউজ ল্যান্ড কভার চেঞ্জ প্রোগ্রামের তরফেও হিমবাহগুলোর গলে যাওয়া নিয়ে বিপদ সঙ্কেত দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে হিমালয় থেকে উত্পন্ন নদীগুলোতে পানি সরবরাহ সঙ্কটে পড়বে বলেই দাবি করেছে তারা। যা হলে গোটা গাঙ্গেয় উপত্যকার চাষাবাদের চরম ক্ষতি হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। ইসরো’র ওয়েব ম্যাপিং সার্ভিস ‘ভুবন’-এর তথ্য বলছে, হিমালয়ের ২,১৯০টির মধ্যে প্রায় ৭৬ শতাংশ হিমবাহের বরফাবৃত এলাকা কমে গিয়েছে। ছোট ছোট হিমবাহগুলো এভাবে গলতে থাকলে গঙ্গায় পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন আইআইটি খড়্গপুরের হাইড্রোজিওলজির অধ্যাপক অভিজিত মুখোপাধ্যায়ও।