২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করা যাচাই-বাছাইয়ে বাদ দেওয়া হয় মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা এ এফ এম হেফজুল বারীকে। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের সাবেক এই সহকারী অধ্যাপক যাচাই-বাছাই সংশোধন করতে আপিলের পর চার বছর ধরে ছোটাছুটি করছেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে। বার বার সংশ্লিষ্টদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনও প্রতিকার পাচ্ছেন না তিনি।
হেফজুল বারী অভিযোগে বলেন, ‘২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই সাক্ষাৎকার দেই। সেই যাচাই-বাছাইয়ে বলা হয়েছে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি, অস্ত্র দেওয়া হয়নি আমাকে। তাই মুক্তিযোদ্ধা নই। অস্ত্র দেওয়ার দায়িত্ব কি আমার ছিল? কমান্ডারের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছি। তা যাচাই-বাছাইয়ে ধরা পড়েনি। যাচাই-বাছাইয়ের ফাঁদে পড়ে আপিল করেও চার বছরের বেশি সময় ঘুরছি মন্ত্রণালয় ও জামুকায়। গত সপ্তাহে জামুকায় গিয়ে আপিল শুনানির বিষয়ে এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখনও কোনও খবর নেই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুজিব বাহিনীর সদস্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আবেদন জানান ২০০৯ সালে। ওই বছর সালের ২৬ মে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ এফ এম হেফজুল বারীকে প্রত্যয়ন করেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৭ সালের যাচাই-বাছাই ফরম পূরণ করেন তিনি। যাচাই-বাছাই প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি দেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তাকে অস্ত্র দেওয়া হয়নি এবং তিনি কোনও যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেননি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন।
অথচ ২০১৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে অনলাইনে আবেদনে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য শর্ত দেওয়া হয়েছিল ‘শুধু প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরাও’ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের অন্যান্য শর্তগুলোর মধ্যে ছিল—‘সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণকারী’, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সহকারী’, ‘মুজিবনগর কর্মচারী’, ‘আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবাদানকারী নার্স/চিকিৎসক’, ‘যুদ্ধ চলাকালীন এমএনএ/এমপিএ’, ‘পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত নারী’, ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী/কলাকুশলী’ অথবা ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়’ হতে হবে।
প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে ‘শুধু প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী’ হলেই আবেদন করার বিধান রাখা হলেও মুক্তিযোদ্ধা এ এফ এম হেফজুল বারীর ক্ষেত্রে ‘প্রশিক্ষণ নিয়েছেন’ উল্লেখ করে যাচাই-বাছাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন’।
যাচাই-বাছাই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জামুকা প্রতিনিধি, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি স্বাক্ষর করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা এ এফ এম হেফজুল বারী অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা কি নিজে বাজার থেকে অস্ত্র কিনে যুদ্ধ করবেন? আমি মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে কমান্ডারের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছি। মন্ত্রণালয় ও জামুকার এই স্ববিরোধিতা ছাড়াও পক্ষপাতিত্বের শেষ নেই। তদবির করতে পারলে ভুয়া লোকরাও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যান। আর তদবির না করলে বছরের পর বছর আবেদন করলেও যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়ে যান। আমি সেই বঞ্চিতদের দলে। ’
যাচাই-বাছাই আবেদন ফরম ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের গৌরীপুর কাজী বাড়ী গ্রামের এ এফ এম হেফজুল বারী মুজিব বাহিনী ক্যাটাগরিতে নকলার খন্দকার পাড়া বানেশ্বরদী (ভূরদী) বিএলএফ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর সূর্য্যদী যুদ্ধ অংশ নেন। এছাড়া ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর শেরপুরের তারাকান্দা বাজার সংলগ্ন জলিল সরকারের বাড়ি থেকে রাজাকার মজনুকে রাইফেলসহ আটক করেন। রাজাকার আটকের সময় সঙ্গে ছিলেন তার কমান্ডার খন্দকার মোশারফ হোসেন এবং আরেক মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হেলাল উদ্দিন।
এ বিষয়ে জামুকার মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. জহুরুল ইসলাম রোহেলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর ফোনে মেসেজ পাঠিয়েও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সব শেষ করতে হবে। বৈঠকে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপিল আবেদনসহ সব সমস্যা সমাধান হবে। কোনও সমস্যা থাকবে না। ‘