মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের চার আসামির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাদের আইনজীবী (অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড) জয়নুল আবেদীন তুহিন এই আবেদন করেন। আপিল আবেদনকারী আসামিদের মধ্যে আমৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলেন- মো. শামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম, ২০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. খলিলুর রহমান, মো. আব্দুল্লাহ ও মো. আক্কেল আলী আজাদী ওরফে রইছ উদ্দিন।
আসামিদের খালাস চেয়ে আবেদন করার তথ্য শনিবার (১৩ মার্চ) সকালে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। তিনি বলেন, আসামিদের খালাসের জন্যে ৩০টি যুক্তি সম্বলিত ৭৫ পৃষ্ঠার মূল আপিল আবেদনের সঙ্গে যাবতীয় নথিপত্রসহ ৬৮০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার এক মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করতে হয়। সে হিসাবে গত বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) চার আসামির আপিল আবেদন করা হয়।
এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ৯ আসামির মধ্যে ৩ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড, ৫ জনের ২০ বছর করে কারাদণ্ড ও আব্দুল লতিফ নামে একজনকে খালাস দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার।
রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার পাঁচজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক চার আসামির একজন সকালে আদালতের বাইরে এসে ধরা দিয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। এর পরে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
গফরগাঁওয়ের মামলায় ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, ঋষিকেশ সাহা, মোখলেছুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী, রেজিয়া সুলতানা চমন ও তাপস কান্তি বল।
আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় চারজনকে হত্যা ও নয়জনকে আটক এবং নির্যাতনের চারটি অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর এই মামলার তদন্ত শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হলে ২০ ফেব্রুয়ারি প্রসিকিউশনে জমা দেয়া হয়। তদন্তে ৬০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলেও আদালতে ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল। এছাড়া জব্দ তালিকার সাক্ষী ছিলেন আরও দুজন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) মোট ১৮ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য পেশ করেন আদালতে।
অভিযোগ গঠনের পর ২০১৮ সালের ১০ মে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শুরু হয়। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) মোট ১৮ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্কের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্যে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখেন আদালত। এর পরে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় একই বছরের ১১ মার্চ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এর আগে ৪১টি রায়ে মোট ১০৩ জনের সাজা হয়েছিল। ওইদিন ট্রাইব্যুনালের রায়ে ঘোষিত ৪২তম মামলায় ৮ জনের সাজা হয়। এখন পর্যন্ত মোট ১১১ জনের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। ৪২টি মামলার ১১১ জন আসামির মধ্যে এই প্রথম কেউ বেকসুর খালাস পেলেন।