ভায়াগ্রা হচ্ছে এমন একটি ওষুধ যা পুরুষদের যৌনক্ষমতা বাড়ায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে যৌন ইচ্ছা বাড়ানোর ওষুধের রাসায়নিক নাম হচ্ছে ফ্লিবানসেরিন – যার নাম দেয়া হয়েছে ‘মেয়েদের ভায়াগ্রা’।
প্রায় তিন বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটা প্রথম ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। এখন মিসরের একটি স্থানীয় ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানিই এটা তৈরি করছে।
মিসরে মেয়েদের ভায়াগ্রার রং গোলাপি। এখানে বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, পুরুষদের ‘নীল বড়ির’ নারী সংস্করণ হচ্ছে এই গোলাপি বড়ি।
মিসর হতে যাচ্ছে আরব দুনিয়ার প্রথম দেশ যারা ‘মেয়েদের ভায়াগ্রা’ প্রকাশ্যে বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।
মিসরের মতো একটি সামাজিকভাবে রক্ষণশীল দেশে কি এর বাজার আছে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন বিবিসির স্যালি নাবিল। তিনি কথা বলেছেন এমন কয়েকজন মিসরীয় নারীর সাথে – যারা এ ওষুধ খেয়েছেন।
‘আমার ঘুম পাচ্ছিল, মাথা ঘুরছিল, হৃদপিন্ডের গতি দ্রুততর হয়ে গিয়েছিল’ – এটা খাওয়ার পর কি হলো তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন লায়লা, মিসরের একজন রক্ষণশীল গৃহবধু। এটা অবশ্য তার আসল নাম নয়।
১০ বছর বিবাহিত জীবন যাপন করার পর, নিতান্ত কৌতূহলবশেই লায়লা এই মেয়েদের ভায়াগ্রা খাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তবে ‘নীল বড়ি’ অর্থাৎ পুরুষদের ভায়াগ্রা আর মেয়েদের গোলাপি ভায়াগ্রা সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে কাজ করে।
পুরুষদের ভায়াগ্রা কাজ করে পুরুষাঙ্গে রক্তপ্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে যাতে তার উত্থানশক্তি বাড়ে। আর ফ্লিবানসেরিন মূলত মেয়েদের বিষণ্নতা কাটায় এবং মস্তিষ্কে রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য এনে তার যৌন ইচ্ছা বাড়ায়। সেদিক থেকে মিডিয়াতে একে ‘মেয়েদের ভায়াগ্রা’ বলা হলেও এ নামটা যথার্থ কিনা – এ প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
লায়লা তার পরিচয় গোপন করেছেন এই জন্য যে মিসরে একজন নারীর পক্ষে যৌন সমস্যা বা তার যৌন প্রয়োজন সম্পর্কে কথা বলা এখনো খুবই বিরল ঘটনা।
লায়লার কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা নেই। তিনি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এ ওষুধ কিনলেন। মিশরে এটা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।
ওষুধের দোকানদার বললো: ‘প্রতি রাতে একটি করে কয়েক সপ্তাহ ধরে এটা খেতে হবে। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।’
লায়লা জানালেন, ‘আমার স্বামী আর আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম এটা খেলে কি হয়। একবার খেয়ে দেখেছি আর খাবো না।’
তবে এর উৎপাদক কোম্পানির মতে মাথা ঘোরার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছুদিন পরই সেরে যায়। কিন্তু চিকিৎসক এবং ওষুধ-প্রস্তুতকারকদের মধ্যে অনেকে এর সাথে একমত নন।
মিসরে ইদানিং বিবাহবিচ্ছেদের হার ক্রমশ বাড়ছে, আর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী দম্পতিদের মধ্যে নানা রকম যৌন সমস্যা এর অন্যতম কারণ।
ফ্লিবানসেরিনের স্থানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানি বলছে, মনে করা হয় মিসরের প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে তিন জনেরই যৌন ইচ্ছা কম। কিন্তু এটা অনুমাননির্ভর – কারণ এ দেশে এ বিষয়ে পরিসংখ্যান মেলা দুষ্কর।
এই কোম্পানির প্রতিনিধি আশরাফ আল-মারাগি বলছেন, ‘এই ওষুধ রীতিমত বিপ্লব, মিসরে এরকম চিকিৎসার খুবই প্রয়োজন।’
একজন ফার্মাসিস্ট বলেছেন, এ ওষুধ খেলে রক্তচাপ অনেকটা কমে যেতে পোরে, এবং হৃৎপিন্ড ও যকৃতের সমস্যা আছে এরকম কারো দেহে এটা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
মুরাদ সাদিক নামে কায়রোর একটি ফার্মেসির এক কর্মকর্তা বলছেন, এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলে দেয়া হলেও ক্রেতারা এটা কেনার জন্য চাপাচাপি করে। প্রতিদিন প্রায় ১০ জন ক্রেতা আসে। বেশির ভাগই পুরুষ, কারণ মেয়েরা এখনও দোকানে এসে এটা কিনতে লজ্জা পায়।
তবে হেবা কুতুব নামে মিসরের একজন সেক্স থেরাপিস্ট বলছেন, তিনি এই ফ্লেবানসেরিন তার রোগীদের দেবেন না – কারণ এর কার্যকারিতা খুবই কম, বরং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই বেশি।
তার কথা হলো – “মেয়েদের ক্ষেত্রে যৌনতা একটা মানসিক ব্যাপার। একজন নারী কখনোই তার স্বামীর সাথে সুন্দর যৌন সম্পর্ক রাখতে পারবে না যদি স্বামী তার সাথে ভালো ব্যবহার না করে। কোন ওষুধই এ ক্ষেত্রে কাজ করবে না।”
লায়লা বলছেন, তিনি এমন অনেক নারীকে চেনেন যাদের স্বামীর সাথে সম্পর্কের কারণে যৌন জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলছেন, ‘স্বামী যদি ভালোবাসাপূর্ণ সঙ্গী হন, তাহলে তার যৌন দুর্বলতা থাকলেও স্ত্রী তাকে সহযোগিতা করবে, তার চিকিৎসা করাবে। কিন্তু স্বামী বিছানায় পটু হলেও যদি সে অত্যাচারী হয়, তাহলে তার প্রতি স্ত্রীর কোন আগ্রহ থাকে না।’
‘পুরুষরা এটা বুঝতে পারে বলে আমার মনে হয় না’ – বলেন তিনি।
যাই হোক, ফার্মেসি কর্মকর্তা সাদিকের মতে মিসরে ফ্লিবানসেরিনের বিক্রি আশাব্যঞ্জক, এবং ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।
তবে সেক্স থেরাপিস্ট মিজ কুতুব উদ্বিগ্ন যে এর ফলে বিবাহিত জীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।