নওগাঁর রাণীনগরে মানসিক ভারসাম্যহীন সাদেকুলের বেপরোয়া আচরণে অতিষ্ট হয়ে তার ভাই-ভাবী ছোট একটি ইটের ঘরের মধ্যে খাঁচায় বন্দি করে রেখে খাওয়া-দাওয়া,গোসলসহ অন্যান্য সকল ধরনের সার্বিক পরিচর্যা করছে। মাঝে মধ্যেই খাঁচা থেকে বের করা মাত্রই আশেপাশের লোকজনকে মারমুখি আচরণের কারণে অতিষ্ট হয়ে বাইরে বেশিক্ষন না রেখে আবারো খাঁচায় বন্দি করা হয় তাকে। এভাবেই ৫ বছর ধরে চলছে সাদেকুলের খাঁচায় বন্দি জীবন।
পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কিছুদিন লাগাতার চিকিৎসা করে কোন ফল না হওয়ায় তার সুস্থ্যতার আশা ছেড়েই দিয়েছে বড় ভাই শেরেকুল ইসলাম। তিনি বলেন,অভাবের সংসারে সাদেকুলকে চিকিৎসা করার মতো আর সামর্থ আমার নেই। ইতি মধ্যে বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবার আরো সংকটে পড়েছে। সাদেকুলের স্ত্রী তার ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে গেছেন। ভাই হিসেবে আমি তার দায় এড়াতে পারছি না। সাদেকুল একই স্থানে বন্দি থাকায় স্বাস্থ্যহানী হয়ে ধীরে ধীরে তার শারিরিক গঠন পরিবর্তন হয়ে বন্যপ্রাণীর রুপ ধারণ করছে। দেখলে মনে হয় বণ্যপ্রাণী খাঁচায় বন্দি করা হয়েছে। লোকজন কাছে গেলেই বলেন, এবা পাগলক এনা ভাত দে রে, খিদা লাগিছে। কাথাবার্তা কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও আচরণটা তার ভারসাম্যহীন। প্রতিবেশিরা বলছে, আগে থেকেই সাদেকুল এই ভালো এই মন্দ। কখন পাগল আবার কখন ভালো।
জানা যায়, উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ভবাণীপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাদেকুল ইসলাম (৪০) সে স্থানীয় ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে সাংসারিক কাজ কর্মের কারণে একপর্যায় পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। ২৩ বছর বয়সে পারিবারিক আয়োজনের মাধ্যমে তার বিবাহ দিলে সে এক পুত্র সন্তানের জনক হন। কিন্তু তার নানা রকম বেপরোয়া আচরণে অতিষ্ট হয়ে সাদেকুলের স্ত্রী তাকে ১২ বছর আগে তালাক দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। ছেলেটি এখন নওগাঁ জেলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।
সাদেকুলের বড় ভাই শেরেকুল ইসলাম জানান, প্রায় পনের বছর ধরে সাদেকুল পাগল হয়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় চিকিৎসা করে কোন ফল পাইনি। প্রায় ১০বছর আগে মানসিক হাসপাতাল পাবনাতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। পরে ২০১৯ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গেলে সেখানেও ডাক্তাররা তাকে কিছু ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়। কিন্তু সাদেকুল তাতে সুস্থ্য না হওয়ায় বেপরোয়া আচরণের কারণে খাঁচায় বন্দি করে রাখি।
উপজেলার গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খান হাসান জানান, সাদেকুলের বাড়ি আর আমার বাড়ি একই পাড়ায়। সে অনেক আগে থেকেই হঠাৎ করে মানষিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এমনকি লোকজন ও ছোট বাচ্চাদের মারপিটসহ ভয় দেখায়। রাতের আঁধারে নদীর পাড়ে, রাস্তাঘাটে গিয়ে বেপরোয়া চলা ফেরা করে। যে কোন দূর্ঘটনা থেকে হেফাজতের কারণে তার বড় ভাই কখনো শিকল পরিয়ে আবার কখনো খাঁচায় বন্দি করে রাখেন। চিকিৎসা যতটুকু করেছে তার কোন ফল হয়নি। তবে আমার পরিষদ থেকে কোন সুযোগ আসলে আমি তার ব্যাপারে সহযোগীতা করবো।#