পুরনো বাড়ি, ১০০ মিলিয়ন ডলার ও এক ফিলিস্তিনির দৃঢ়তা

পুরনো দিনের একটি দোতলা বাড়ি, পাশে একটি দোকান। কতই বা দাম হতে পারে এই বাড়িটির? এই বাড়িটির মালিককে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বিক্রি করতে, কিন্তু তিনি রাজি হয়নি। দাম বাড়াতে বাড়াতে তারা ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত নিয়ে যায়, কিন্তু তাতেও বাড়ির মালিককে রাজি করানো যায়নি।

কিন্তু একজন ফিলিস্তিনির কাছে যে এটি শুধুই একটি বাড়ি নয়, দখলদার ইসরাইলের রক্ষচক্ষু উপেক্ষা করে নিজ মাতৃভূমিতে পড়ে থাকাই যে একটি আন্দোলন তার কাছে। তাই ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের কাড়ি কাড়ি টাকার প্রস্তাবও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন অবলীলায়।

আরবি টুয়েন্টি ওয়ান সংবাদ পোর্টালের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট মনিটর জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের (পশ্চিম তীরের) হেবরন শহরের বাসিন্দা আবদুল রউফ আল মোহতাসেব। শহরটির পুরনো এলাকা আল সাহলায় অবস্থিত তার বাড়িটি, বাড়ির রাস্তার লাগোয়া অংশটিতে রয়েছে তার পোশাকের দোকান। অনেক দিন ধরেই বাড়িটি কিনে নিতে চাইছে ইহুদিরা। কিন্তু মোহতাসেবের এক কথা তিনি ইসরাইলিদের কাছে বাড়ি বিক্রি করবেন না।

আল মোহতাসেব জানিয়েছেন, এর আগেও অনেকবার ইসরাইলিরা দোকানসহ তার বাড়িটি কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন; কিন্তু তিনি কখনোই রাজি হননি। আল মায়াদিন টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহতাসেব বলেছেন, সর্বশেষ যেবার দুজন তার বাড়ি কিনতে এসেছে প্রথমে ৬ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬০ লাখ মার্কিন ডলার থেকে তাদের প্রস্তাব শুরু হয়েছে। এরপর তারা সেটি বাড়াতে বাড়াতে ৪ কোটি ডলারে উঠায়, শেষ পর্যন্ত যা গিয়ে ঠেকেছে ১০০ মিলিয়ন অর্থাৎ ১০ কোটি ডলারে; কিন্তু তিনি সব প্রস্তাবই ফিরিয়ে দিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ইসরাইলিদের কাছে বাড়ি বিক্রি করবো না, পৃথিবীর সব অর্থ নিয়ে প্রস্তাব দেয়া হলেও তা আমি প্রত্যাখান করতে পারি। আমি কখনোই আমার দেশ ও জনগনের সাথে প্রতারণা করবো না।

বাড়ি কিনতে আসা ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা মোহতাসেবকে বলেছেন, তুমি যদি হামাস কিংবা ইসলামিক জিহাদের ভয়ে বাড়ি বিক্রি করতে না চাও তবে আমরা তোমাকে সুরক্ষা দেব। অস্ট্রেলিয়া কিংবা কানাডার মতো কোন দেশে তোমাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। যেখানে তুমি নতুন জীবন শুরু করতে পারবে এই টাকা দিয়ে। তোমার পছন্দমতো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে।

এই ফিলিস্তিনি জানান, বাড়ি কিনতে আসা লোক দুজন ক্রমশই টাকার পরিমাণ বাড়াতে থাকে। তিনি তাদের বলেন, মাতৃভূমিতেই থাকতে চাই। ‘এখানে শৈশব কাটিয়েছি আমি। কিন্তু আমার নাতি-নাতনিদের বঞ্চিত করতে চাই না’।

মোহতাসেব বলেন, একবার বোয়াজ নামের এক ইহুদি বসতিস্থাপনকারী এসে ৩ কোটি ডলারে বাড়িটি কেনার প্রস্তাব দেয়। আমি তাকে বাড়ির ইটগুলি দেখিয়ে বলি, কোন ইটটির জন্য তুমি ৩ কোটি ডলার দিতে চাও। বোয়াজ বলেন, আমি পুরো বাড়ি কিনতে চাই। মোহতাসেব বলেন, এই টাকায় এই বাড়ির একটি ইটও কিনতে পারবে না।

আরেক ইন্টারভিউতে আল মোহতাসেব বলেছেন, ইসরাইলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের কারণে হেবরনের ফিলিস্তিনিরা খুবই ভোগান্তিতে আছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top