কৃষিবিদদের মিলনমেলা-২০২১

BAUআজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কৃষিবিদরা। কৃষকরা তাদের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাত চাষের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে এ খাদ্য ঘাটতি দূর করে। যা ছিল বঙ্গব্ধুর স্বপ্ন। কারণ তিনি ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন। এজন্যে তিনি ঐতিহাসিক ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বরে (বর্তমান নাম) কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করে পে-স্কেল সংশোধনের ব্যবস্থা করেন। এর পর থেকে প্রথম শ্রেণির সুবিধাগুলো পে-স্কেলের মাধ্যমেও স্বীকৃত হয়। ফলশ্রæতিতে কৃষিবিদরা যেমন সম্মানিত হয়েছেন, তেমনি দেশে কৃষিরও ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আবাদি জমি দিন দিন কমার পরও জনসংখ্যা দ্বিগুণ বাড়লেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। সেদিন এ ঘোষণা না হলে অর্থাৎ কৃষিবিদদের পদমর্যাদা উন্নত না হলে আজও এ দেশের কৃষিক্ষেত্র থাকতো আধারেই। কারণ সে মর্যাদা পেয়েই দেশের মেধাবী সন্তানরা এসেছে কৃষি শিক্ষায়। শুরু হয় ফসলের নতুন জাত কিংবা ফসলের উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি। শুধু ফসল নয়, ফসলের পাশাপাশি গবাদিপশুর উন্নয়ন, দুধের মান ও পরিমাণ বাড়ানো, মাংসের জন্য উন্নত জাতের পশুপালন প্রযুক্তি, বিভিন্ন ধরনের মাছের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি খামারের বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষির সমৃদ্ধি। ১৩ ফেব্রæয়ারির পর থেকেই বাংলার কৃষির পরিপূর্ণ বিকাশ শুরু হয়। কৃষি ক্ষেত্রের এ উন্নয়ন আজ সারা বিশে^র কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যে ২০১০ সাল থেকে কৃষিবিদ ইন্সস্টিটিউট এদিনকে কৃষিবিদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতা অনুসারে কৃষিবিদ দিবস-২০২১ উপলক্ষে কৃষি শিক্ষার আতুর ঘর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) আয়োজন করেন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের। ১৩ তারিখ সকাল থেকেই বাকৃবি চত্বরে আসতে থাকেন বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত কৃষিবিদগণ। তারা দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে এসে মিলিত হন প্রাণের বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে। দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্ত¡রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাঝে অনেকে বন্ধুদের নিয়ে ফটোশুটে ব্যস্ত সময় পার করে। কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আতশবাজি দিয়ে দিনটি পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে ১০০ পাউন্ড ওজনের কেক কাটেন কৃষিবিদ কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

দিবসটি উপলক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ময়মনসিংহ সিটি করর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু এবং বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। এসময় কৃষিবিদদেও সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব কৃষিবিদ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম এবং বরিশালের ইউনির্ভাসিটি অব গেøাবাল ভিলেজের উপাচার্য কৃষিবিদ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম খানকে একুশে পদক-২০২০ প্রাপ্তির জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৭ (মরণোত্তর) অর্জন করায় বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ন ম নাজমুল আহসানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এভাবে কৃষিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ দিনটি উৎসব মুখর করে পালন করেন বাকৃবি প্রশাসন।

Share this post

scroll to top