ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যান থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়া জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজানকে বর্ধমান বিস্ফোরণের মামলায় ২৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। সেখানকার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শুভেন্দু সামন্ত গতকাল এই রায় ঘোষণা করেন।
প্রতিবেশী দেশে যাওয়ার পর সেখানে জেএমবির জঙ্গি তৎপরতায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এই বোমা মিজান। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর এর সঙ্গে জেএমবির নাম উচ্চারিত হতে থাকে। তদন্তে নেমে এনআইএ জানায়, খাগড়াগড়ে ওই বিস্ফোরণের ঘটনার হোতা বাংলাদেশের পলাতক জঙ্গি মিজান, যিনি সেখানে কওসর আলী নামে তৎপরতা চালাচ্ছিলেন।
বাংলাদেশে যাবজ্জীবন সাজার আসামি মিজানকে বিহারের বুদ্ধ গয়া বোমা বিস্ফোরণের মামলায়ও খুঁজছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে বেঙ্গালুরুতে এনআইএর হাতে তিনি ধরা পড়েন।
এনআইএর কৌঁসুলি শ্যামল ঘোষ জানিয়েছেন, আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ, বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ), বিস্ফোরক আইন ও বিদেশ আইনের মোট সাতটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল মিজানের বিরুদ্ধে। তিনি আদালতে দোষ স্বীকার করে নেন।
রায়ে পাঁচটি ধারায় বিচারক মিজানকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। আর দুটি ধারায় দেওয়া হয়েছে দুই বছর করে সাজা। সব ধারার সাজা একের পর এক কার্যকর হবে। তাতে সব মিলিয়ে মোট ২৯ বছর জেল খাটতে হবে এই জঙ্গিকে। সেই সঙ্গে তাঁকে ২৯ হাজার রুপি জরিমানাও করেছেন আদালত।
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে জেএমবির যে তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, বোমা মিজান তাঁদেরই একজন। একুশ শতকের শুরুর দিকে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার কুখ্যাত জঙ্গি নসরুল্লাহর কাছ থেকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন মিজান। ভারতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বোমা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। বোমা তৈরির দক্ষতার কারণেই সংগঠনে তাঁর নাম হয় ‘বোমা মিজান’ বা ‘বোমারু মিজান’।
২০০৯ সালের ১৪ মে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা থেকে বোমা মিজানকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। ২০১৪ সালে ত্রিশালের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়ার পর মিজানকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। তবে ওই সময়ই তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান এবং সেখানে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করেন। সূত্র : এনডিটিভি, আনন্দবাজার।