খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সরকারের পতন ঘটাতে হবে

বিএনপিবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিঃশর্তভাবে মুক্ত করতে হলে সরকারের পতন ঘটাতে হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়া এখন কারাবন্দি থেকে গৃহবন্দি। সরকার খালেদা জিয়াকে নয়; গণতন্ত্রকে বন্দি করেছে। আজ দেশ চালাচ্ছে মাফিয়া সরকার। তাই দেশকে রক্ষা করতে হলে রাজপথে আন্দোলন করে এই মাফিয়া সরকারের পতন ঘটাতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সংগঠনকে শক্তিশালী করে অচিরেই মাঠে নামবেন বলে ঘোষণা দেন নেতারা।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে দলটির নেতারা এ ঘোষণা দেন। খালেদা জিয়ার ‘কারাবন্দিত্বে’র তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে সারাদেশে জেলা-মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের বিএনপিসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত হয়। তারা খালেদা জিয়ার ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে তার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কারণে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় সাজা নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে যান। এরপর জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজা হয়। দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা হয়েছে তার। করোনাভাইরাস মহামারিকালে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। তারপর থেকে তিনি গুলশানে নিজের বাসা ‘ফিরোজায়’ আছেন। তবে সেখানে দলের নেতা-কর্মীসহ কারও সঙ্গে তার সাক্ষাত হচ্ছে না।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুক্তির জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য আমরা কোনো প্রকার ব্যবস্থা করতে পারি নাই। তবে খালেদা জিয়া সারাজীবন বন্দি থাকবেন না। ধীরে ধীরে দলের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হচ্ছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। অচিরেই আমরা মাঠে নামবো, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।

আল-জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি বাংলাদেশকে একটি মাফিয়া রাষ্ট্র বানানোর জন্য নয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে এ ধরনের প্রতিবেদন দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক। যারা এখন ক্ষমতায় আছেন তারা প্রমাণ করুন- আল জাজিরায় যা কিছু আসছে সব মিথ্যা। আমরা আপনাদের সমর্থন দেবো, আমরা আপনাদের সাহায্য করবো। তবে তার আগে প্রমাণ করেন।

ওয়ান ইলেভেনে কারাগারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘরে বসে বসে লম্বা লম্বা কথা বলেন। ওয়ান ইলেভেনে কারাগারে একত্রে ছিলাম। এই ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, যদি একবার ছাড়া পাই; আমি আর রাজনীতি করবো না-আমি নিজে স্বাক্ষী। সে সময় বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারাও কারাগারে ছিলেন। তাদের কারো মামলা এখন নেই কিন্তু খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের সবার মামলা চলমান আছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাইলে যুদ্ধে শামিল হতে হবে, সেই যুদ্ধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই হবে। সেই যুদ্ধ স্লোগানের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকবে না। সেই যুদ্ধ শুধু আমাদের নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার জন্য নয়। দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, খালেদা জিয়াকে বন্দি থেকে মুক্তির জন্য করতে হবে। তিনি মুক্ত হলে গণতন্ত্র মুক্তির সূচনা হবে। তাই কোনোভাবে রাজপথ ছাড়বো না। কথায় নয় কাজে প্রমাণ করতে হবে। আমাদের রাজপথ দখলে নিতে হবে এবং সকল পথ-ঘাট জনগণের দখলে নিতে হবে।

গয়েশ্বর বলেন, আজকে নির্বাচন কমিশন সরকারকে খুশি করার জন্য যা ইচ্ছা তাই করছে। নেতাকর্মীরা যখন করোনাকে উপেক্ষা করে রাস্তায় বেড়িয়েছেন তখন এ জীবনকে শান্তিময় করার জন্য, এই জীবনকে অর্থবহ করার জন্য, এ দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য আমরা যুদ্ধে শামিল হই।

গুলশানে খালেদা জিয়া গৃহবন্দি উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, করোনার কারণে খালেদা জিয়াকে বাড়িতে রেখেছে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়নি। বিএনপি এতো বড় একটি দল, এই দলের হাজারো নেতা-কর্মী। কী কারণে খালেদা জিয়া বন্দি থাকবে? আর আমরাই বা কেনো মুক্ত কন্ঠে শুধু আকুতি জানাব, মুক্তির জন্য কিছু করবো না- এটা হতে পারে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, যুবদলের সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

Share this post

scroll to top