একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগনের ভোট দেয়ার অধিকার হারানোর বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই নির্বাচন ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জনগন ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা নিয়ে আর কোনো প্রশ্নের সুযোগ নেই।
বুধবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ভোটবিহীন সরকারকে পরাজিত করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের সেতুবন্ধন আরো দৃঢ় করার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, একটি কথা আপনাদেরকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা যে কথাই মনে করুন না কেনো ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। ২০ দলীয় জোট যখন গঠন হয় তখন একই কথা ছিলো, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যখন গঠন হয় তখন এই একই প্রশ্ন এসছে। ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের মধ্যে যে সেতুবন্ধন সেটাই বিএনপি তৈরি করেছে। সেটার অবশ্যই ঐতিহাসিকভাবে প্রয়োজন ছিল এবং প্রয়োজন আছে। আমরা মনে করি এখন আরো বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মরহুম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। গত ২৭ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী চৌধুরী।
জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব এসএমএম শামীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য এএসএমএস আলম, নওয়াব আলী আব্বাস খান, শফি উদ্দিন ভুঁইয়া, মাওলানা রুহুল আমিন, সেলিম মাস্টার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মহসিন সরকার, কাজী মো. নজরুল, ভাসানী স্মৃতি ফোরামের কামরুল হুদা ও মরহুম নেতার মেজ ছেলে মইনুল রাব্বি চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন আমরা মানি না। এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব রয়েছে, সেই দায়িত্ব হচ্ছে কোনো মতেই হতাশার কোনো জন্ম না হয় তার জন্য সজাগ থাকা এবং প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে সচেতনভাবে জাতীয় ঐক্যকে আরো বেশি দৃঢ় করা। কেউ যদি মনে করে থাকেন যে, একা বা এককভাবে ভয়াবহ দানবের সঙ্গে সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক বিজয় লাভ করবেন তাহলে তিনি আমার সোজা কথা তিনি সঠিক সত্যটা উপলব্ধি করতে পারছেন না। এটাই বাস্তবতা। আজকে ভয়াবহ দানবের সঙ্গে যারা আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধবংস করে দিচ্ছে, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকে ধবংস করেছে, গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধবংস করেছে তাদের পরাজিত করতে হলে জনগনের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সেই জনগনের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আপনাকে সেই বিজয় অর্জন করতে হবে।
ঐক্যের বিষয় বিভিন্ন প্রশ্নের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অনেক প্রশ্ন আছে। রাজনীতি করলে প্রশ্ন থাকবে। প্রশ্ন থাকলে তো রাজনীতি হবে না। রাজনীতির চর্চার প্রয়োজন আছে। কোন পরিস্থিতিতে কোন পর্যায়ে কোন উদ্যোগ সঠিক কি বেঠিক সেই বিষয়ে আলোচনা আছে। সেই আলোচনাগুলোর জন্য ফোরাম রয়েছে। আমরা আশা করবো যে, সেসব ফোরামগুলোতে বিষয়গুলো সঠিকভাবে আলোচনা হবে।
নতুন প্রজন্মের প্রতি প্রত্যাশা রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বন্ধুগণ হতাশ হবেন না। আমি জানি আমাদের অনেকের বয়স হয়ে গেছে, সত্তর উর্ধব বয়স অনেকের। আর বোধ হয় কিছুই হবে না। অবশ্যই হবে। হতাশাই তো শেষ কথা হতে পারে না। কারণ আমাদের যাদের বয়স হয়ে গেছে, আমাদের সামনে নতুন প্রজন্ম আছে। তাদের সামনে বিরাট ভবিষ্যত আছে। তারা আরো বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হবে, আরো বেশি করে দেশ তারা ভালোবাসবে। দেশকে ভালোবেসে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমি একটা কথা প্রায়ই বলি- এটাকে আমার যেন একটা দর্শন মনে হয়। রবি ঠাকুরের ‘দুরন্ত আশা’ কবিতার শেষের দুইটি ছত্র প্রায় মনে হয়। যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ-মন্থরে, সব সঙ্গীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া। তবু বিহঙ্গ ওরে বিহঙ্গ মোর এখনই অন্ধ, বন্ধ করো না পাখা- এটাই হচ্ছে মূল কথা। পাখা বন্ধ করবেন না। এগিয়ে যাবেন। সূর্য উদয় হবেই। সামনের যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সেটা আপনার, আপনাদের।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ নিজেরা প্রত্যক্ষ করেছে তারা দেখেছে যে, এটা নির্বাচন হয়নি, এটা তামাশা হয়েছে, প্রহসন হয়েছে এবং এই প্রহসনটা একটা নিষ্ঠুর প্রহসন। ক্রুয়েল মোকারি যে মানুষের লিগ্যালিটিকে হত্যা করা। এটা আওয়ামী লীগ কেনো করলো অনেকেই এই প্রশ্ন করেছেন? গত ১০ বছর বছর ধরে তারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, যেভাবে খুশি দেশ পরিচালনা করেছে। তাদের ভাষায় উন্নয়ন হয়েছে । তাহলে নির্বাচনে এভাবে সমস্ত মানুষকে বঞ্চিত করে তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার প্রয়োজনটা কি ছিল?
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের একটা বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এই নির্বাচনের ফলে আওয়ামী লীগের জনগনের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। আজকে আওয়ামী লীগের যারা সমর্থক তারাও পর্যন্ত বলেছেন আমি আমার ভোটটা দিতে পারলাম না কেন? কারণ তারা ভোট দিতে পারেনি। এটা সমগ্র দেশের চিত্র।