ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কল্যাণপুর নিবাসি পঙ্গু মোজাম্মেল হোসেন বাবুলের হত্যাকারিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগি পরিবার।
শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পঙ্গু মোজাম্মেল হোসেন বাবুলের স্ত্রী শিউলী আক্তারের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চাচাতো ভাই শাহজালাল। এতে বলা হয়, মোজাম্মেল হোসেন বাবুল একজন গরীব রিকসা চালক ছিলেন। কল্যাণপুর মৌজায় পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত তার স্বত্বদখলীয় ১৬ শতাংশ ভূমি রয়েছে। সাংসারিক অভাব অনটনের কারণে দুই যুগ আগে ঢাকায় রিকসা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামীর ডান পা কেটে ফেলতে হয়। স্ত্রী-সন্তানের ভরণ পোষণের জন্য এক পা দিয়েই রিকসা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাঝে-মধ্যে গ্রামের বাড়ীতে এসে বসতভিটার গাছপালা দেখাশোনা করে ঢাকায় ফিরে যেতেন। পঙ্গু মোজাম্মেলকে নিরীহ ও দূর্বল পেয়ে প্রতিবেশি সুরুজ আলী চৌকিদার ও ভাই চাঁন মিয়া, আব্দুল হাই ও ভাই আব্দুল হালিম, হাফিজুল ইসলাম হাফি ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার, স্বামী- হাফিজুল ইসলাম হাফি এবং সুরুজ আলী চৌকিদারের স্ত্রী এলমা বেগম গং তার স্বত্বদখলীয় ১৬ শতাংশ জমির মধ্যে তিন শতাংশ ভূমি জবরদখল করে নেয়। বাকী জমিটুকু জুলুম অত্যাচার করে বিভিন্ন অপকৌশলে জবরদখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এনিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ এবং কোতোয়ালী মডেল থানায় জিডি করেন। এরপর থেকে প্রতিপক্ষরা চরম শত্রæতা পোষণ করতে থাকে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, পঙ্গু মোজাম্মেল বসতঘরের বারান্দায় একটি মনিহারি ব্যবসা করে এবং সরকারীভাবে প্রাপ্ত পঙ্গুভাতার টাকায় জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিপক্ষগণের কলহ বিবাদ ও মারমুখি আচরণের মুখে স্থানীয় সালিশ দরবারে মীমাংসা হলেও আমার স্বামীর বাকী ভূমিটুকু জোড় পূর্বক বেদখল করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষের বেপরোয়া আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে আমার স্বামী সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়ার মনস্থির করলে বিষয়টি প্রতিপক্ষগণ জানতে পেরে আমার স্বামীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। গত ২৫ ডিসেম্বর বিকেল চারটার দিকে পূর্ব শত্রæতার জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রসহ আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে কিল, ঘুষি ও লাথি মারে এবং এলোপাথারি লাঠিপেঠা করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে বাঁচাতে ছোট ভাই মোবারক হোসেন এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। প্রতিপক্ষরা আহত পঙ্গু মোজাম্মেলকে টেনে হেঁচড়ে স্থানীয় বাদল মেম্বারের বাড়ীতে নিয়া যান। খবর পেয়ে তিনি সেখান থেকে আশংকাজনক অবস্থায় পঙ্গু মোজাম্মেলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে চাইলে প্রতিপক্ষরা বাঁধা দেয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর তিনি মারা যান। পরদিন উল্লেখিত প্রতিপক্ষগণের নামে আমার স্বামী হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি। মামলা নং ৯৬(১২)২০, ধারাঃ- ৩০২/৩৪ দন্ডবিধি। পঙ্গু মোজাম্মেল হত্যাকান্ডের পর একমাস অতিবাহিত হলেও কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। বরং আাসমিরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা বেড়াচ্ছে এবং বাদী ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় হত্যাকারিদের হুমকির মুখে তারা অসহায় জীবন যাপন করছেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভ‚ক্তভোগিরা।
সংবাদ সম্মেলনে পঙ্গু মোজাম্মেলের মা মমতাজ বেগম, বড় ছেলে বিল্লাল হোসেন, ছোট ছেলে মাহাদি হাসান, মেয়ে ফারজানা আক্তার, শিউলীর বোন সালমা আক্তারসহ আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। ##