ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে দলে জায়গা পাননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণভ্রমরা সদ্য সমাপ্ত ঘরোয়া আসরে দুর্দান্ত বোলিং করেও নির্বাচকদের নজরে আসতে পারেননি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে– সাবেক অধিনায়কের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বিদায় ঘণ্টা কি বেজে গেছে? নিযুত ভক্তের জিজ্ঞাসা– ক্যারিয়ারে কি তা হলে যতিচিহ্ন আঁকতে যাচ্ছেন মাশরাফি? সেই প্রশ্নের উত্তরও জানিয়ে দিয়েছেন দেশের ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি।
সবশেষ গত মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ দল। তখনই নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান মাশরাফি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি থেকে তো আগেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। টেস্ট খেলার মতো ফিটনেট হারিয়েছেন তারও আগে। এবার ওয়ানডে দলে ডাক না পাওয়ায় মাশরাফির ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কালো মেঘ আরও ঘনীভূত হলো।
সম্প্রতি বিসিবির আয়োজনে পাঁচটি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু কাপে চোটের কারণে শুরুতে ছিলেন না মাশরাফি। পরে খেলে দারুণ পারফরম্যান্স দেখান তিনি। জেমকন খুলনাকে ফাইনালে তুলতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ক্যারিয়ারের সেরা ৫ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলার দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন তিনি। মাশরাফি প্রমাণ দেন বয়স হলেও ফুরিয়ে যাননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলে নেয়া হয়নি বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ককে।
তবে ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪ জনের প্রাথমিক দলেও জায়গা না পাওয়াকে ‘স্বাভাবিকভাবেই’ দেখছেন মাশরাফি।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ভালো যায়নি মাশরাফির, তখন থেকেই তাকে ঘিরে নানা সমালোচনা। মাশরাফি কবে অবসর নেবেন, সেই প্রশ্নও উঠেছিল। অথচ ওই বিশ্বকাপ বাদে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ দলের সেরা পেসার তিনিই। বিশ্বকাপের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে গুঞ্জন উঠেছিল- এটিই মাশরাফির শেষ সিরিজ। কিন্তু তিনি অবসরের ঘোষণা না দিয়ে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। পাশাপাশি ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
করোনাকালের দীর্ঘ বিরতির পর অনুশীলনের ঘাটতি নিয়েই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন মাশরাফি। নিয়মিত অনুশীলন করে ঘাম ঝরিয়ে প্রায় ১০ কেজি ওজন কমান শরীরের। ফেরেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে। ঘরোয়া আসরে দুর্দান্ত পারফরম করেও দলে জায়গা হয়নি মাশরাফির।
মাশরাফিকে না নেয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। দল ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে সোমবার তিনি জানান, আগামী বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করেই মাশরাফিকে রাখা হয়নি। ২০২৩ বিশ্বকাপ সামনে রেখে সব পরিকল্পনা করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই নির্বাচক কমিটিসহ সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই মাশরাফিকে বাদ দেয়া হয়েছে।
ইনজুরি ও ফিটনেস সমস্যা ছাড়া মাশরাফির ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়া এবারই প্রথম। নির্বাচকদের এ সিদ্ধান্তে ম্যাশের হতাশ হওয়ারই কথা। তিনি অবশ্য নির্বাচকদের এ সিদ্ধান্তকে পেশাদারি মনোভাবের সঙ্গে নিয়েছেন। বলেছেন, ‘জায়গাটা পেশাদার। টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি এই সিদ্ধান্তকে পেশাদারিভাবে নিচ্ছি। আমার মনে হয়, এখানে আর কিছু বলার নেই।’
তবে মাশরাফি এখনই ক্রিকেটকে গুডবাই বলতে চাচ্ছেন না। ‘আমি আগেও বলেছিলাম, জাতীয় দলে জায়গা না পেলেও খেলা চালিয়ে যাব। আজও একই কথা বলছি– এর বাইরে অন্য কিছু ভাবছি না।’
জাতীয় দল থেকে বাদপড়া মাশরাফিকে আপাতত অপেক্ষায় থাকতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেট শুরুর। হয়তো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবার তাকে দেখা যেতে পারে। মাশরাফির স্বপ্ন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হোম গ্রাউন্ডে বড় আসরে দলের হয়ে খেলা।
একাধিকবার ইনজুরিতে পড়ায় ২০০১ সালে টেস্টে অভিষেক হওয়া মাশরাফির সাদা পোশাকের ক্যারিয়ার শেষ হয় ২০০৯ সালের জুলাইয়ে। মাত্র ৩৬ টেস্ট খেলেন তিনি। ২০১৭ সালের এপ্রিলে শ্রীলংকা সফরে হঠাৎ করেই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন।
এ পর্যন্ত ২২০ ওয়ানডে খেলে ২৭০ উইকেট পেয়েছেন মাশরাফি। রান করেছেন ১৭৮৭।