নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণের পরে হত্যা করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়ার পর স্কুলছাত্রীর জীবিত ফেরত আসার ঘটনায় (জুডিশিয়াল ইনক্যুয়ারি) বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে ২৭ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন মুহাম্মদ শিশির মনির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামিনের আশ্বাস দিয়ে পুলিশ আসামিদের আদালতে স্বীকোরোক্তিতে কী বলতে হবে তা শিখিয়ে দিয়েছে। এ কারণে পুলিশের শেখানো কথা আদালতে স্বীকারোক্তি হিসেবে বলেছেন বলে আসামিরা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও ভয়ভীতি দেখিয়ে ও মারধর করে কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করার স্বীকারোক্তি নেয় পুলিশ।
এর আগে সোমবার (৪ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জে কথিত ধর্ষণ ও হত্যার শিকার স্কুলছাত্রীর জীবিত ফেরত আসার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রটের বিচারবিভাগীয় তদন্ত হাইকোর্টে আসে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে কথিত ধর্ষণ ও হত্যার শিকার স্কুলছাত্রীর জীবিত ফেরত আসার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার স্কুল ছাত্রীর জীবিত ফেরত আসার ঘটনায় নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন দায়ের করা হয়। পাঁচ আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ আবেদন দায়ের করেন।
অন্য আইনজীবীরা হলেন মো. আসাদ উদ্দিন, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির এবং মো. মিসবাহ উদ্দিন।
গত ২৪ আগস্ট ‘‘ধর্ষণের পর নদীতে লাশ ফেলে দেয়া স্কুলছাত্রীর ৪৯ দিন পর জীবিত প্রত্যাবর্তন’’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সেই প্রতিবেদন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন। তখন আদালত লিখিতভাবে আবেদন করতে বলেন। এরপর মঙ্গলবার একটি রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে শিশির মনির জানান, গত ৪ জুলাই ৫ম শ্রেণির ছাত্রী দিসা নিখোঁজ হয়। গত ৬ আগস্ট নিখোঁজ স্কুলছাত্রী দিসার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ আব্দুল্লাহ, রকিব এবং খলিল নামে তিনজনকে গ্রেফতার করেন।
তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, তারা স্কুলছাত্রী দিসাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেন।
জবানবন্দি গ্রহণের পর আসামিদের জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট দিসাকে খুঁজে পাওয়া যায়। সে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। দিসা ফেরত আসায় ধর্ষণ ও হত্যা বিষয়ে আসামিদের দেয়া স্বীকারোক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।