নেত্রকোনা শহরের কাটলি এলাকায় পারিবারিক করবরস্থানে স্বামীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম (৭৪)। গতকাল শনিবার আসরের নামাজের পর স্থানীয় অন্বেষা স্কুল মাঠে জানাজার নামাজের পর তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফকরুজ্জামান জুয়েল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহমেদ, ওসি তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। মরদেহ ঢেকে দেয়া হয় জাতীয় পতাকায়। এসময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এরও আগে বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে মরদেহ নেত্রকোনা শহরের কাটলি এলাকার নিজ বাসায় এসে পৌঁছায়। তখন সেখানে স্বজন ও এলাকাবাসীর মাঝে এক বেদনাবিধূর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে আয়েশা খানম মারা যান। আয়েশা খানমের জন্ম নেত্রকোণার সদর উপজেলার গাবড়াগাতি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি আয়েশা খানম বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজেকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত করেন আয়েশা খানম।
প্রগতিশীল আন্দোলনের এক বাতিঘর বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সহ-সভাপতি মানবতাবাদী নির্লোভ সহজ-সরল মনের মানুষ ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম তিনি ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন।
শনিবার ভোরে ঢাকাস্থ নিজ বাস ভবনে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ঢাকার বিআরবি হাসপালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাদ আছর তার নিজ হতে গড়া অন্বেষা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জানাযার নামাজ শেষে শহরের কাটলী এলাকার আদি-বাসিন্দা স্বামী মরহুম গোলাম মুর্তজা কবরের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়।
মৃত্যুকালে একমাত্র কন্যা উর্মি খানমসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি ১৯৪৭ সালে ১৮ অক্টোবর নেত্রকোনা সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতী গ্রামে ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। দেশের নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম। ছাত্রকালীন সময় থেকে নারী নেত্রী হয়ে উঠেছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম। তিনি সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের আন্দোলন-সংগ্রাম সংঘটিত করতে সব সময় সামনের সারিতে ছিলেন।
তিনি নেত্রকোনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে স্কুল ও ময়মনসিংহের মমিনুন্নেছা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা খানম একাত্তরের দিনগুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল ছাত্রনেতাগণ মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদেরই একজন ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম। আগরতলায় গিয়ে আহত বীরমুক্তিযোদ্ধাগণের চিকিৎসা সেবাও দিয়েছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম। বীরমুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার মৃত্যুতে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু, সংরক্ষিত মহিলা আসন-১৭ হাবিবা রহমান খান শেফালী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতিয়র রহমান খান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার রায়, পৌর মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খান, আয়েশা খানমের ভাগনে সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, প্রতিরোধ যোদ্ধা অসিত সরকার সজল, ভাগনে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ নূর খান মিঠু, ছোট ভাই নেত্রকোনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি.এম. খান পাঠান বিমলসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।