ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন বা হামাসের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দিতে চায় ইসরাইল। শনিবার হামাসের সামরিক শাখা জানিয়েছে, গত নভেম্বরে গাজায় আন্ডারকভার অপারেশন পরিচালনা করে দখলদার শক্তি। ওই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল হামাসের যোগাযোগ নেটওয়ার্কে তালগোল পাকিয়ে দেয়া। পুরো সিস্টেমটিই বিশৃঙ্খল করে দিতে চেয়েছিল তারা।
হামাস জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর ইসরাইলের বিশেষ বাহিনী গাজা উপত্যকায় এ অভিযান পরিচালনা করে। ইসাইলের দাবি, প্রকৃতপক্ষে ওই ঘটনা ছিল একটি গোয়েন্দা মিশন। কিন্তু পরে গোয়েন্দারা ধরা পড়ে গেলে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়।
ফিলিস্তিন সরকারের মূল শক্তি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের রাজনৈতিক দল ফাতাহ। দলটি ইসরাইলের সমর্থনপুষ্ট। অন্য দিকে, হামাস ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ দিন সশস্ত্র সংগ্রাম করে আসছে। সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করলেও ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষকতায় দলটির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয় ফাতাহ। তবে গাজা উপত্যকায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দলটির। গাজা উপত্যকার নির্বাচনে হামাসের জয়লাভের পর থেকেই সেখানে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসরাইল ও মিসর। তারা গাজায় যেকোনো পণ্যসামগ্রী আমদানি-রফতানিতে কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। ইসরাইল মনে করে, এতে হামাস চাপে থাকবে আর গাজাবাসীও নিষেধাজ্ঞা শিথিলের আশায় হামাসকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করবে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে হামাস সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে পণ্যসামগ্রী আনা-নেয়া করত। সুড়ঙ্গ দিয়ে মিসর থেকে আনা পণ্যসামগ্রীর ওপর নির্ধারিত করই ছিল তাদের আয়ের উৎস। তবে মিসরে জেনারেল সিসি ক্ষমতা দখলের পর ফিলিস্তিনিদের ব্যবহৃত এসব সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দেয়। কেননা, হামাসের সাথে মিসরের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করে মিসর সরকার।
ফিলিস্তিন সরকারের একটি অংশ মনে করে, হামাসকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি তাদের সামরিক শাখা বিলুপ্ত করা জরুরি। কিন্তু বিশাল সংখ্যক ফিলিস্তিনির সমর্থন থাকায় তা অনেকটা অসম্ভব। কারণ বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ফাতাহের চেয়ে হামাসকে বেশি বিশ্বস্ত মনে করেন। তারপরও হামাসকে চাপে রাখতে তাদের কৌশল কাজ করছে বলে মনে করছে ফিলিস্তিন সরকার। তবে শুধু হামাসকে চাপে রাখতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গাজার অর্থনীতি। সঙ্কট ও মানবিকবিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন গাজার বাসিন্দারা। তাতেও কার্যকরী ফল না আসায় হামাসের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হয় ইসরাইল।