হ্রদ, কুয়াশা, মেঘ, পাখিদের লুকোচুরি, গোধূলির রং, জোছনার স্নান দেখে বর্ষবরণ করতে পাহাড়ে নেমেছে পর্যটকের ঢল। ৪ হাজারের অধিক মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় করছেন পার্বত্যাঞ্চলে। ফলে রাঙামাটি এখন উৎসবের নগরী। একই উৎসবে মেতেছে অপর দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানও। গতকাল ছিল থার্টি ফাস্ট নাইট। অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষের আগের দিন। এ দিনকে কেন্দ্র করেই রাঙামাটিতে আসতে শুরু করেন হাজার হাজার পর্যটক। ফলে শহরের আবসিক হোটেল, মোটেল, সরকারি রেস্ট হাউসগুলো এখন কানায় কানায় ভরপুর। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকৃতির টানে দূর-দুরন্ত থেকে এসেছেন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আগত পর্যটকরা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝর্ণা, পলওয়েল পার্ক, ডিসি বাংলো পার্ক ও কাপ্তাই-আসামবস্তী সড়কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কাপ্তাই হ্রদ নৌ-ভ্রমণের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। আবার কেউ প্রকৃতিকে উজাড় করে দিচ্ছেন নিজেকে। বিকালের সূর্যের সোনালি রঙ যখন ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তখনি মানুষের ভিড় জমে পর্যটন ঝুলন্ত সেতুতে। শীতের উষ্ণতায় হ্রদ, পাহাড় আর কুয়াশার লুকোচুরি খেলার দেখা মেলে এখানে। রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স, ডিসি বাংলো পার্ক, পলওয়ে পার্ক, সুবলং ঝর্ণা, আসামবস্তি সড়ক, প্যাদা টিং টিং, বরগ্যাং ও ফুরামন পাহাড়ের মতো অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে রাঙামাটিতে। এসব স্থানে পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে রেস্টুরেন্ট আর বিনোদন কেন্দ্র। রেস্টুরেন্টগুলোতে মিলছে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিভিন্ন খাবার। যার প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ থাকে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে আছে এ অঞ্চলের মানুষের দেশিও পোশাক ও পণ্য সামগ্রী। যারা ঘুরতে আসছেন তারাও ছুটে যাচ্ছেন এসব শপিংমলে। ফলে চাঙা হয়ে উঠেছে স্থানীয় ক্ষুদ্র পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলো। একই সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাপ্তাই হ্রদের নৌ-ট্যুরিস্ট বোর্ট ব্যবসায়ীরা। দিন রাত ছুটছেন তারা কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণ পিপাসুদের নিয়ে। রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, নতুন বছরকে কেন্দ্র করে পর্যটক এসেছেন এখানে। ইংরেজি নতুন বছরকে ঘিরে ৯০ভাগ পর্যটক মোটেল বুকিং রয়েছে।
কুয়াকাটায় পর্যটকদের ভিড় : কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, বছরের শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় এবং নতুন সূর্যোদয়কে বরণ করতে কুয়াকাটায় ভিড় জমিয়েছেন হাজারও পর্যটক। গতকাল তারা সমুদ্রের ঢেউয়ে সাঁতার কাটাসহ দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতে পর্যটকরা নেচে-গেয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে উন্মাদনায় মেতেছিলেন। জানা গেছে, সৈকতের জিরো পয়েন্ট, লেম্বুর চর, ঝাউবন, গঙ্গামতির লেক, কাউয়ার চর, মিশ্রিপাড়া, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, রাখাইন পল্লী এবং শুঁটকি পল্লীসহ দর্শনীয় স্পটে রয়েছে পর্যটকদের উপস্থিতি। গতকাল কেউ নিজের স্মার্টফোনে সেলফি তুলেছেন, আবার কেউবা গান, গল্প-আড্ডায় মেতে থেকেছেন। সৈকতে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় জানাতে প্রতি বছরই এভাবে ছুটে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। এবারও পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে সেভাবেই স্বাগত জানানো হচ্ছে।