জামালপুর জেলার সদর উপজেলাসহ সাতটি উপজেলার সরিষা ক্ষেতের পাশে বাকশো বসিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষিরা।
সরেজমিনে সরিষাবাড়ি ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সাতপোয়া, আদারভিটা, ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতের পাশে শত শত বাকশো সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করছে ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষিরা।
সরিষাবাড়ি উপজেলার ন্যায় জেলার দেওয়ানগঞ্জ মাদারগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহসহ সদর উপজেলার সরিষা ক্ষেতের পাশে শত শত বাকশো বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছে ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষিরা।
প্রতি সপ্তাহে একটি বাকশো থেকে ৫-৬কেজি মধু সংগ্রহ করে থাকেন। এতে প্রতি বাকশো থেকে মাসে ২০-২৫কেজি মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌ চাষিরা। প্রতি কেজি মধু খুচরা ৫-৬ টাকায় বিক্রি করে মৌ চাষিরা। আর পাইকারিতে বিক্রি হয় ৫-৬ হাজার টাকা মণ। পাইকেররা ওই মধু বিভিন্ন কোম্পানিতে বিক্রি করে থাকেন।
মৌ চাষিরা তাদের সংগ্রহিত মধু যদি সরাসরি বড় বড় কোম্পানিতে বিক্রি করতে পারলে বেশি লাভবান হতে পারতেন। মৌ চাষিরা বছরের প্রায় ছয় মাস বিভিন্ন ফল ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। অবশিষ্ট ছয় মাস তারা বেকার জীবন-যাপন করে। অবশিষ্ট ছয় মাস মৌমাছিকে খাবার হিসেবে চিনি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন। মৌসুমের ছয় মাস মৌমাছি নিয়ে ভালোভাবে জীবন যাপন করলেও বাকি ছয় মাস তারা মানবেতর জীবনযাপন করেন।
মৌসুমের ছয় মাস যে মধু সংগ্রহ করে তা সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে পারে না। পাইকেরদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়। মৌ চাষিদের সংগ্রহিত মধু সরকারিভাবে সংগ্রহ করা হলে মৌ চাষিরা আরও লাভবান হবে। যে সময় মৌ চাষিরা বেকার জীবন যাপন করে সে সময় যদি সরকার মৌ চাষিদের আর্থিক সহযোগিতা করলে মৌ চাষিরা আরও লাভবান হতে পারতেন।
তাহলে সে সময় মৌমাছিদের বাঁচিয়ে রাখতে মৌ চাষিদের আর কোনও সমস্যা হতো না। মৌ চাষিদের মধু সরকারিভাবে সংগ্রহ ও মৌ চাষের জন্য আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানান মৌ চাষিরা।
সরিষাবাড়ি উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নে সরিষা ক্ষেতের পাশে বাকশো বসিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করছে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলার বীরতারা গ্রামের মৌ চাষি তাজুল ইসলাম, তিনি জানান সরিষা ক্ষেতের পাশে বাকশো বসিয়ে মধু সংগ্রহ করে মৌ চাষিরা যেমন জীবন পরিচালনা করে তেমনি সরিষা চাষিরাও বেশি ফলন পায়। মৌমাছি সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ চাষ বৃদ্ধির ফলে সরিষার ফলন বেশি হয়। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহীত মধু যদি সরাসরি কোম্পানিতে বিক্রি করতে পারলে মৌ চাষিরা বেশি লাভবান হতে পারতেন।
মৌ চাষি গোলাম মোস্তফা জানান, ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষিরা ছয় মাস মধু সংগ্রহ করলেও বাকি ছয় মাস বেকার বসে থাকে। বেকার থাকাবস্থায় জীবন- যাপন করতে খুব কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সে সময় মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখতে খাদ্য হিসেবে চিনি দেয়া হয়।
ছয় মাস চিনি কিনে আর মৌ চাষিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন পরিচালনা করে খুব কষ্ট করে। সরকার যদি মৌ চাষিদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতেন তাহলে মৌ চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ দেশে বেকারত্বের সমস্যা কমে যেত।
মৌ চাষি মো. নাসির উদ্দিন জানান, মৌ চাষিদের সংগ্রহিত মধু যদি সরকারিভাবে সংগ্রহ করা হতো তাহলে ভ্রাম্যমান মৌ চাষিদের মধু নষ্ট হতো না আর চাষিরাও সঠিক দামটা পেতো।
মাদারগঞ্জ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বংশ বেলতৈল এলাকায় বাকশো বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছে ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষি মো. রাসেল, তিনি জানান, এ মৌসুমে সরিষা আবাদ একটু বেশি হয়েছে। তবে ঘন কুয়াশার কারণে মৌমাছিরা বাকশো থেকে বের হয়ে সরিষা ফুল থেকে মধু করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই এবার গত বছরের তুলনায় মধু সংগ্রহ কম হচ্ছে। মৌ চাষিরা অর্থ সঙ্কটে পড়েছ। এই অর্থ সঙ্কট নিরসনে সরকারি সহায়তার দাবি জানান।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম জানান, সারা জেলায় প্রায় ৩০টি স্পষ্টে প্রায় সাড়ে চার হাজার বাকশো বসানো হয়েছে। কৃষকরা সরিষার পরে বোরো করবে। অন্তবর্তীকালীন ফসল হিসেবে সরিষা খুব লাভজনক। এতে সরিষা চাষিরাও লাভবান হচ্ছে আবার মৌ চাষিরাও লাভবান হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। যেখান থেকে প্রায় দুই কোটি টাকার মধু উৎপাদন হবে।