প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ কর্মকমিশন গঠন নিয়ে গড়িমসি

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে পৃথক কর্মকমিশন গঠন করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এবং নির্দেশনা থাকার পরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) গড়িমসিতে বিষয়টি ঝুলে আছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এবং নির্দেশনা দেয়ার পর প্রায় দু’বছর অতিবাহিত হলেও এখনো এ ব্যাপারে ডিপিইতে কমিটি গঠন ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই বলে মন্ত্রণালয় এবং ডিপিই সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিপিইর মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি মন্ত্রণালয়কে ইঙ্গিত করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অবগত। সেখানে খোঁজ নিন।

জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিপিইকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা একটি কমিটি করেছে বলে শুনেছি। কমিটিকে প্রস্তাবিত কমিশনের একটি খসড়া প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক অতিরিক্ত সচিব এবং অধিদফতরের (ডিপিই) কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এবং সহসা পৃথক কর্মকমিশন গঠন না করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, পৃথক কমিশন হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হবে। ডিপিই থেকে চাহিদা পাঠাতে হবে মন্ত্রণালয়ে। সেখানে অনুমোদনের পর সেটি গঠিত কমিশনে যাবে। কমিশন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেবে, পরীক্ষা গ্রহণ করে ফল প্রকাশের পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে অধিদফতরে যাবে এবং পরে নিয়োগ পাবেন শিক্ষকরা। এই দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে পৃথক কর্মকমিশন গঠন বিলম্বিত হচ্ছে। এখন পুরনো নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ডিপিই বিজ্ঞপ্তি দিয়েই নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

২০১৭ ও ২০১৮ সালে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও ডিপিইর পরিচালনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের যৌথ তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এ পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন করেছে নেপ। এ পরীক্ষাগুলোর কয়েকটির প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের আটকও করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়ায় এখন তাদের সরাসরি নিয়োগের পথ বন্ধ হয়েছে। এখন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই প্রধান শিক্ষক হতে হচ্ছে। পৃথক কর্মকমিশন গঠন হলে তারাও এরই অধীনে নিয়োগ পাবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

মন্ত্রণালয় ও ডিপিইর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সহসা পৃথক কর্মকমিশন গঠন হচ্ছে না, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এবং নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে। কারণ মন্ত্রণালয় ও ডিপিই চাচ্ছে না পৃথক কর্মকমিশন গঠন গঠিত হোক। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সব ধরনের শিক্ষক নিয়োগে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্তৃত্ব কমিশনের হাতে চলে যাবে।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের (ডিপিই) এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর অলিখিত এক ধরনের বাণিজ্য রয়েছে। ২৬ হাজার বেসরকারি নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের তিন ধাপে সেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সময় কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছিল। তৎকালীন একজন অতিরিক্ত সচিবের সরকারি বাসভবনে জাতীয়করণ করা শিক্ষকদের হাট বসেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আরেক অতিরিক্ত সচিবের অবসরকালীন ছুটি চলাকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়করণ বঞ্চিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তাদের দাবির যৌক্তিকতার প্রতি সমর্থন শুধু নয়, এ ব্যাপারে আন্দোলনেও সক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই অতিরিক্ত সচিবদ্বয় বর্তমানে অবসরে রয়েছেন।

শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার মান ও স্বচ্ছতা সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা কতটুকু নিশ্চিত করা গেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দায়িত্ব হচ্ছে নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ। শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট পরীক্ষা (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা-পিইসি) গ্রহণ ও পরিচালনা তাদের কাজ বা দায়িত্ব নয়। অথচ মন্ত্রণালয় ও ডিপিই এখন তাই করছে। এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছেন না। তবে শিক্ষাবিদরা এ পরীক্ষা (পিইস) বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন শুরু থেকেই।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top