বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষ তো জানতে পেরেছে তাদের চরিত্রটা কী? তাদের চরিত্র শোধরায়নি। তাই জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপরও যে কয়টা সিটে তারা জিতেছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, তাদের পার্লামেন্টে আসা উচিত।’
শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের এক যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সমস্ত ঘটনা লিপিবদ্ধ করা আছে। আপনারা মাঠে-ঘাটে দেখেছেন, টেলিভিশনে দেখেছেন, কীভাবে তারা নির্বাচনটা বানচাল করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু তারা পারেনি। এখন বিএনপি নির্বাচনে হেরেছে, এই দোষটা তারা কাকে দেবে? দোষ দিলে তাদের নিজেদের দিতে হয়। কারণ, একটি রাজনৈতিক দলের যদি নেতৃত্ব না থাকে, মাথাই না থাকে, তাহলে সেই রাজনৈতিক দল কীভাবে নির্বাচনে জয়ের কথা চিন্তা করতে পারে?’
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল পলাতক আসামিকে দিয়ে রাজনীতি করতে গেলে সেখানে কী রেজাল্ট হয়, সেটাই তারা পেয়েছে। তাও হতো না, যদি তারা নির্বাচনে যে প্রার্থী দিয়েছে, সেই প্রার্থী নিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্যটা না করতো। তাহলে আরও ভালো ফল তারা করতে পারতো।’
টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে সব থেকে লক্ষণীয় বিষয় ছিল মানুষের মধ্যে একটা স্বত:স্ফূর্ততা এবং ভোট দেয়ার জন্য আগ্রহ। বিশেষ করে এদেশের তরুণ সমাজ, যারা প্রথম ভোটার এবং নারী। এবারের নির্বাচনটা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হলেও কিছু কিছু জায়গায় বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে গেছে। কোথাও তারা নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করেছে। তাদের এই অপকর্মের কারণে বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা অনেক আছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে তখনই কিন্তু এদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে যে সরকার জনগণের সেবক হতে পারে। সরকার জনগণের জন্য কাজ করতে পারে। আর সরকার কাজ করলে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা স্বর্ণযুগ ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্র কখনো থেমে যায় না। ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। আমরা ভোট বেশি পেলাম কিন্তু সরকার গঠন করতে পারলাম না। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের জীবনে যে দুর্বিষহ অবস্থা ছিল, সেটা সবাই জানি। সেটা নিয়ে আর আমার বেশি বলার প্রয়োজন নেই।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটগতভাবে জয়ী হওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আমাদের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফলটা পৌঁছাতে যেন পারে সেইভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি বলেই মানুষের এই উপলব্ধিটা এসে গেছে যে-আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে তারা ভাল থাকে, তাদের জীবনমান উন্নত হয়। তাদের দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হতে হয় না। তারা শান্তিতে থাকতে পারে। তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়।’
২০১৪ সালে বিএনপিজোটের নির্বাচন ঠেকানো চেষ্ঠার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা দেশের মানুষ কখনো মেনে নিতে পারেনি। ২০১৪ সালে আবার আমরা সরকার গঠন করি। আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা একটানা দশ বছর হাতে সময় পেয়েছিলাম। যার ফলে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে একটা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় আমরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে পেরেছি। তার ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়লাভ করেছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে যারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল, তারা কী করবে? তারাও কিন্তু সবাই এগিয়ে এসেছে আমাদের এবারের নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার জন এখানে ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক-শ্রমিক-কামার-কুমার-জেলে-তাঁতী-মেহনতি মানুষ-ব্যবসায়ী সম্প্রদায় থেকে শুরু করে প্রত্যেকের মাঝে একটি আকাঙ্খা ছিল যে, আওয়ামী লীগ এলে তারা ভালো থাকবে, দেশটা ভালো চলবে, দেশের উন্নতি হবে। এই উপলব্ধিটা তাদের মাঝে ব্যাপকভাবে দানা বেঁধে যায়।’
বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেয়া মামলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এসেছি। আমরা অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে এসেছি। জনগণের বিশ্বাস-আস্থাটা যে কারণে আমাদের ওপরে এসেছে। আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করি জনগণের কল্যাণে, জনগণের স্বার্থে। আর জনগণ আজকে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, আমরা নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের জীবনমান উন্নত হয়, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা প্রতিটি কর্মসূচি নিয়েছি।’
বক্তব্যের শুরুতে মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য শেষে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সভায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচ টি ইমাম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ উপদেষ্টা ও কার্যনির্বাহি সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতির আগমন উপলক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা জিরো পয়েন্টে রাস্তার দু’পাশে অবস্থান নেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেন। এ সময় পল্টন মোড় হয়ে জিরোপয়েন্ট ও গুলিস্তানগামী যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।