বিবিএ পড়ুয়া কাদের যখন চা দোকানি

কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলায় সেনগ্রামের ছেলে আব্দুল কাদের। বিবিএ (ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এর এই ছাত্রটি এখন চা বিক্রেতা।

তাহলে শুনুন সে গল্প :

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অবসর সময় পার করছিলেন কাদের। এভাবে বসে থাকতে তার ভালো লাগছিলো না। অতি সাধারণ পরিবারের ছেলে হলেও স্বপ্ন তার অনেক বড় হওয়ার। কী করা যায় ভাবছিলেন। আসলে যারা ভাবতে জানেন তাদের বোধ হয় সুযোগও এসে যায়।

তার ভাই রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় একটি ইটের ভাটায় কাজ করেন। একদিন তার কাছে মনে হলো এই ইটের ভাটায় একটি চা পানের দোকান দিলে ভালোই চলবে। কারণ এখানে কোন চা পানের দোকান নাই। তিনি তার ভাই আব্দুল কাদেরকে বিষয়টি জানালেন। এ খবরটি শুনে আব্দুল কাদেরও সিদ্ধান্ত নিলেন ইটের ভাটায় চা পানের দোকান দিবেন।

ভাইয়ের কাছ থেকে মাত্র বারো হাজার টাকা নিয়ে আব্দুল কাদের ইটের ভাটায় চা পানের দোকান দেন। এভাবেই চা দোকানি হয়ে গেলেন বিবিএ’র ছাত্র আব্দুল কাদের।

প্রথম দিন আব্দুল কাদেরের চা পানের দোকানে মাত্র আশি টাকা বিক্রি হয়। এরপর দিন বারোশত টাকা, এরপর দুই হাজার, এরপর তিন হাজার টাকা। এখন গড়ে তার প্রতিদিন বিক্রি হয় দুই হাজার পাঁচশত টাকা।

আব্দুল কাদের বলেন এই দোকানের মাধ্যমে আমি মাসে পঁচিশ/ত্রিশ হাজার টাকা আয় করি। দোকানে চা পান ছাড়াও কলা, রুটি, বিড়ি-সিগারেটও বিক্রি হচ্ছে।

ভার্সিটির একজন ছাত্র হয়ে চা পানের দোকান করছেন, কখনো খারাপ লাগছে না?

বললেন, কোন কাজই ছোট না। সাফল্য অর্জনের জন্য যে কোন বৈধ কাজ করা যেতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে কোন কাজকেই ছোট করে দেখা হয় না। কে কি বলবে এ কথা ভেবে থেমে থাকার কোন সুযোগ নেই। কেউ আমাকে ইনকাম করে দিবে না। আমার ভবিষ্যৎ আমাকেই গড়তে হবে।

তার মতে, দেশের উন্নতি করতে হলে সবাইকে কাজ করতে হবে কোন কাজকে ছোট মনে করা যাবে না।

বন্ধু মহল বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে আব্দুল কাদের বলেন, আমার বন্ধু মহলের কেউ কেউ প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি। তারা ভাবছে আমি তাদের সাথে দুষ্টুমি করছি। আবার কেউ কেউ বিষয়টি পজেটিভ ভাবে গ্রহণ করেছে।

লেখাপড়া শেষ করে কি করতে চান, চাকরি না ব্যবসা?

তিনি বলেন, আমি একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান তাই কিছুদিন চাকরি করতে চাই মূলধন সংগ্রহ করার জন্য। তারপর ব্যবসা করতে চাই এবং একজন উদ্যোক্তা হতে চাই। আমি চাই আরো মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে।

নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোন কাজকে ছোট মনে করা যাবে না, যখন যে কাজের সুযোগ আসবে সে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। যারা পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পিছু ছুটছেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন অবশ্যই ভালো চাকরির জন্য চেষ্টা করতে হবে তবে চাকরির আশায় বসে থাকা যাবে না।

Share this post

scroll to top