বাংলাদেশে ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরেই এই সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে এ বছর ব্যবস্থাপনাকারী এজেন্সিগুলোর জন্যও ওমরাহ যাত্রী পাঠানোর কোটা দ্বিগুণ করা হয়েছে।
বৈধ এজেন্সিগুলোর বছরে ৫০০ জন পাঠানোর অনুমতি ছিল। কিন্তু এখন প্রতি এজেন্সিকে ১০০০ জন পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করে, যা এরই মধ্যে এজেন্সিগুলোর কাছে পৌঁছেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গড়ে লক্ষাধিক লোক প্রতি বছর ওমরাহ পালন করছেন। এই সংখ্যা চার-পাঁচ বছর আগে ৪০ থেকে ৫০ হাজারের বেশি ছিল না। প্রতি বছর হজযাত্রীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কোটার অতিরিক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব মাওলানা ইয়াকুব শরাফতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, হজ গমনেচ্ছুদের একটি বড় অংশ প্রতি বছরই কোটার অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছেন। তাদের অনেকে ওমরাহ করতে যান। আবার এমনিতেই হজের মতোই ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াই স্বাভাবিক। তিনি জানান, গত বছরও এক লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মানুষ ওমরাহ পালন করেছেন।
বাংলাদেশস্থ সৌদি দূতাবাস থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত বছর বাংলাদেশী ওমরাহ যাত্রীদের অনুকূলে এক লাখ ২৬ হাজার ৪৬৭টি ভিসা ইস্যু করা হয়। তবে প্রকৃত ওমরাহ পালনে গমনকারীর সংখ্যা এক লাখের কিছু বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ২০১৮-১৯ সালে ওমরাহ ব্যবস্থাপনার জন্য ৫ দফায় ৩২৫টি এজেন্সিকে অনুমতি প্রদান করে। প্রত্যেক এজেন্সির জন্য ওমরাহ যাত্রী পাঠানোর কোটা ছিল ৫০০ জন। কিন্তু কিছু এজেন্সি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এই কোটা ছাড়িয়েও ওমরাহ যাত্রী পাঠায়। এই প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় গত ২৩-৯-২০১৮ তারিখে ৬৩টি এবং ১৮-১০-২০১৮ ৩৪টি এজেন্সিকে সতর্ক করে নোটিশ দেয় এবং ভবিষ্যতে কোটার অতিরিক্ত যাত্রী না পাঠানোর জন্য বলে। কিন্তু ওমরাহ যাত্রীদের অব্যাহত চাপ ও এজেন্সিগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি ধর্মমন্ত্রণালয় এজেন্সিগুলোর জন্য ওমরাহ যাত্রীর কোটা দ্বিগুণ করার নোটিশ জারি করে।
সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় প্রতি সপ্তাহেই ওমরাহ যাত্রীদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে। গত সপ্তাহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি ওমরাহ মওসুমে বাংলাদেশের ওমরাহ যাত্রীদের জন্য গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮৪৮টি ওমরাহ ভিসা ইস্যু হয়েছে। মোট ওমরাহ ভিসা ইস্যু হয়েছে ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ২০১টি। এর মধ্যে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ১৩ জন ওমরাহ করার জন্য সৌদি আরব পৌঁছান। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ওমরাহ যাত্রী পাকিস্তানের ছয় লাখ ১৫ জন। তারপর ইন্দোনেশিয়ার তিন লাখ ৯৪ হাজার ২৭ জন এবং ভারত ও মালয়েশিয়ার যথাক্রমে দুই লাখ ৮১ হাজার ৫৪৯ জন ও এক লাখ ৩০ হাজার ৭৯৩ জন। ইয়ামেন, আলজেরিয়া, মিসর, তুরস্ক, আরব আমিরাতের পরই বাংলাদেশের ৫২ হাজার ৪৮৪ জন। গত এক সপ্তাহে এই সংখ্যা আরো বেড়েছে। সৌদি সরকারের ভিশন ২০৩০ এ প্রতি বছর তিন কোটির বেশি ওমরাহ যাত্রীকে ওমরাহ পালনের সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ওমরাহ এজেন্সিরগুলোর লাইসেন্স প্রদান, নবায়নসহ তাদের কার্যক্রম মনিটর করার দায়িত্ব ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হলেও ওমরাহ যাত্রী প্রেরণের পুরো বিষয়টি সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে ওমরাহ যাত্রীদের যাওয়া এবং ফেরত আসার ব্যাপারে দূতাবাস থেকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। বিশেষ করে ওমরাহ যাত্রীরা ভিসার মেয়াদের মধ্যে ফেরত না এলে সে বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হয়। ইতঃপূর্বে ওমরাহর নামে মানবপাচারের অভিযোগে সৌদি সরকার বাংলাদেশের জন্য দুই মওসুম ওমরাহ যাত্রী পাঠানো বন্ধ রেখেছিল। এরপর থেকে ওমরাহ যাত্রীদের ফেরত আসার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ বছরও ইতোমধ্যেই কয়েকটি এজেন্সির ওমরাহ যাত্রীদের কিছুসংখ্যক ভিসার মেয়াদের ফেরত না আসায় এজেন্সিগুলোর কাছে কৈফিয়ত তলব করে তদন্তের মুখোমুখি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওমরাহ এজেন্সিগুলোকে ওমরাহ ব্যবস্থাপনার জন্য সৌদি ওমরাহ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে হতে হয়। এ জন্য এজেন্সিগুলোকে নির্ধারিত ফি দিয়ে সৌদি কোম্পানিগুলোর সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। এরপর ওমরাহ যাত্রীদের পাসপোর্ট স্ক্রিন করে তথ্যসহ ওমরাহ ভিসার অনুমতির (মুফাহ) জন্য সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। অনলাইনে অনুমোদন আসার পর মূল পাসপোর্ট বাংলাদেশস্থ সৌদি দূতাবাসে জমা দেয়া হলে ওমরাহর জন্য ভিসা দেয়া হয়। সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য ওমরাহ ভিসা দেয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে সারা বছরই মানুষ ওমরাহ পালন করতে গেলেও বেশিসংখ্যায় ওমরাহ করতে যান রমজান মাসে।