ময়মনসিংহে বিরোধপূর্ণ জমি কাউন্সিলরের নামে বায়না দলিল

Mymensingh Landময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বিরোধপূর্ণ জমি কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান দুলালসহ প্রভাবশালী চারজনের নামে বায়না দলিল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হলেও কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান দুলালসহ অন্যরা নিরব ভূমিকা পালন করছেন। এদিকে বায়না দলিল হওয়ায় জমির প্রকৃত মালিকানা দাবিদাররা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোহাইলকান্দি এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ১৭ শতাংশ জমির মালিকানা দাবিদার মঞ্জিলা আক্তার, ওয়ারেস উদ্দিন মাষ্টার ও মানিক শেখের পরিবার।

পৈত্তিকসূত্রে জমির মালিকানা দাবিদার মৃত গোলাম মাওলার মেয়ে মঞ্জিলা আক্তার বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে থেকেই তার বাব দাদারা এখানে বসবাস করছেন। তাদের অনেক জমি-জমাও রয়েছে। বিরোধপূর্ণ জমিটি তাদের বসত ঘরের সামনেই। বাবা মারা যাওয়ার পর জমির কাগজপত্র ঘাটতে গিয়ে বিরোধপূর্ণ জমিটি তাদের বাবা’র নামে রেজিস্ট্রি করা এমন কাগজ পান। স্থানীয় মুরুব্বিরাও জমিটি তাদের বলে জানান। জমিটি উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের সহযোগিতা চেয়েও লাঞ্চনা ছাড়া কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকা সত্তেও কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান দুলাল, যুবলীগ নেতা শাহ শওকত ওসমান লিটন, রাশেদুজ্জামান রোমান ও দীপু মন্ডল কিভাবে জমিটি কিনল আমরা তা বুঝে উঠতে পারছি না। এখন তারা দখল নেয়ার পায়তারা করছে।

ক্রয়সূত্রে জমির মালিকানার দাবিদার ওয়ারেছ উদ্দিন মাষ্টার বলেন, সত্তরের দশকে শিক্ষকতার সুবাধে শেরপুর নকলার সন্তান হয়েও ময়মনসিংহ শহরে বিস্তর পরিচিতি লাভ করেন। সেই সুবাধে তখনকার সময়ে গোহাইলকান্দি এলাকায় জমিটি ক্রয় করেন। তখন থেকেই তিনি ভোগ দখল করে আসছেন। বর্তমানেও তার দখলে রয়েছে। তার কোন ছেলে সন্তান না থাকায় একমাত্র মেয়েকে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন। তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সাম্প্রতি অযৌক্তিক ভাবে মঞ্জিলা আক্তার গংরা জমিটি তাদের বলে দাবি করছেন। এনিয়ে আদালতে মামলা করেও তারা সুবিধা করতে পারেনি।

জমির কিছু অংশের দাবিদার মানিক শেখ বলেন, তাদের উচ্ছেদ করে সাড়ে তিন শতাংশ জমি বেদখল দিয়ে বাউন্ডারী দিয়েছে ওয়ারেস উদ্দিন মাষ্টার। এখন বাউন্ডারীর মধ্যে আমরা যেতে পারছি না। বিরোধপূর্ণ জমিটি প্রভাশালীরা কেনায় জমি পাওয়ার আশা একেবারেই আমাদের শেষ হয়ে গেছে। তার দাবি জমির কাগজ পত্র দেখে দাগ ঠিক করে যেন প্রভাবশালীরা দখলে যায়।

স্থানীয় কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান দুলাল বলেন, এলাকার যুবলীগের ছোট ভাইয়েরা জমিটি কিনে বায়না দলিল করার সময় আমার নাম বসিয়েছে। আমি জমি কিনতে আগ্রহী ছিলাম না। পরে তাদের কিছু টাকাও দিয়েছি। জমি নিয়ে বিরোধ ছিল সেটি তার জানা ছিল না বলেও জানান দুলাল।

যুবলীগ নেতা রাশেদুজ্জামান রোমান বলেন, কাগজপত্র সঠিক দেখে ওয়ারেছ উদ্দিন মাষ্টারের কাছ থেকে ৫৬ লাখ টাকায় তারা চারজনে ফ্ল্যাট বানানোর জন্যে জমিটি বায়নাসূত্রে ক্রয় করেছেন। কিন্তু জমিটি তারা এখনও দখলে নিতে পারেননি। জমিটি বৈধভাবে দখল নেয়ার জন্য প্রশাসনসহ সিটি মেয়রের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর পূর্বে সেখানে ধান ক্ষেত ছিল। জমি-জমার তেমন কোন মূল্য ছিল না। এলাকাতেও লোকজন জমি কিনতে আসত না। সাম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন হওয়াতে জমির চড়ামূল্য হয়েছে। তাই এই জমিসহ এলাকাতে অনেক জমির দখল নিয়ে রয়েছে সমস্যা। জমিটি জামেলার বিধায় কম মূল্যে বিক্রিও করা হয়েছে।

Share this post

scroll to top