চাঁদা না দেয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১১ শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে রাতভর নির্য়াতন করেছে রাজধানীর ওয়ারী থানার পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত ১টায় ওয়ারি থানায় এ এস আই নজরুল ইসলাম ও তার টিমের নেতৃতে এ নির্যাতন চালানো হয়। বুধবার সকাল ৭টায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সদরঘাট-গুলিস্তান সড়কের রায়সাহেব বাজার চাররাস্তার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার সাথে জড়িত তিন পুলিশকে সদস্যকে ক্লোজড করেন ওয়ারি জোনের ডিসি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। একইসাথে ঘটনা তদন্তের জন্য এডিসি নুরুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মহিদুল ইসলাম ও একাউন্টিং বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী নিক্সন ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরার সময় গোয়ালঘাট লেনে রাজধানীর ওয়ারী থানার পুলিশ এ এস আই নজরুল ইসলাম তাদের সন্দেহমূলক তল্লাশি করেন।
এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলে তাদেরকে ইয়াবা ও মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত আছে বলে দাবি করেন। এমনকি থানায় নিয়ে মাদক মামলার ভয় দেখায় এবং ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তাদের কাছে যথেষ্ট টাকা না থাকায় এ এস আই নজরুল ইসলাম তাদের সিনিয়র কাউকে টাকা নিয়ে আসার জন্য বলে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯জন শিক্ষার্থী খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় তারা দুই শিক্ষার্থীকে আটক করার কারণ জানতে চাইলে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে এস আই আব্দুল আওয়াল ও এ এস আই নজরুল ইসলাম নেতৃত্বে সবাইকে পুলিশের ভ্যানে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের থানায় বেদড়ক মারধর ও শারিরিকভাবে নির্যাতন করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে । এ সময় সদরঘাট টু গুলিস্তান সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। পরে আটককৃত শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়ার ও অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা প্রশাসনের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ ছেেেড় দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
ওয়ারি জোনের এডিসি নুরুল আমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের কথা স্বীকার করে দু:খ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি বলেন, ওয়ারী জোনের ডিসি আমাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়া ৫ কার্যদিবসের মধ্য সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় ইতোমধ্যে ওয়ারি থানার ডিউটি অফিসার এস আই অপু, এস আই আব্দুল আওয়াল ও এ এস আই নজরুল ইসলামকে প্রাথমিকভাবে ক্লোজড করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোন শিক্ষার্থীকে আটক করা বেআইনি। এছাড়া তাদের মারধর করা চরম অন্যায়। আমরা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেছি। বৃহস্পতিবার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হবে।