অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ও আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনার মধ্যে সম্পর্কটা ছিল আত্মিক, মতাদর্শিক।
ফিদেল ম্যারাডোনাকে বলতেন, ‘প্রিয় বন্ধু’। যার জন্য তার দ্বার ছিল অবারিত। ম্যারাডোনা ফিদেলের সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার ছিলেন স্পষ্ট সমর্থক। কি আশ্চর্য! মিল থাকল চিরবিদায়েও। ২৫ নভেম্বর ছিল ফিদেলের মৃত্যুর দিন। আর ‘প্রিয় বন্ধু’র এই মৃত্যুদিনেই চিরবিদায় নিলেন ফুটবলের চে গুয়েভারা দিয়াগো ম্যারাডোনা।
২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর ৯০ বছর বয়েসে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ফিদেল। দীর্ঘজীবন পাওয়া ফিদেলের জন্য সেদিন অশ্রু ঝরেছিল ম্যারাডোনার। প্রতিক্রিয়ায় ‘ফুটবল ঈশ্বর’ বলেছিলেন, “আমার বাবার মৃত্যুর দিন যে কষ্ট পেয়েছিলাম, সেই শোক, সেই দুঃখ যেন আজ আমাকে আবার আঁকড়ে ধরল।”
ফুটবলের জাদুকর ম্যারাডোনা দীর্ঘজীবন পেলেন না। তার মৃত্যু হল ৬০ বছর বয়েসেই। মাদকের গ্রাসের কারণে অনেকবারই নিরাময় কেন্দ্রে কাটাতে হয়েছে তাকে। ফিদেলের দেশ কিউবাতেও নিয়েছেন অনেক চিকিৎসা। তার দীর্ঘজীবন নিয়ে শঙ্কা তাই বরাবরই ছিল। ফিদেলের বিদায়ের দিন তিনি কেঁদেছিলেন। আজ তার বিদায়বেলায় ফিদেল এসব কিছুর ঊর্ধ্বে। হয়ত সেই ‘উর্ধ্বপানে’ তাদের ফের দেখা হচ্ছে বলে বিশ্বাসীদের মনে দিচ্ছে দোলাচল।
ফিদেলের কাছে ম্যারাডোনাকে বারবার যেতে দেখা গেছে। যে বা পা দিয়ে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিলেন গোটা দুনিয়া। সেই পায়েই ম্যারাডোনা খোদাই করেছিলেন ফিদেলের ট্যাটু। আর হাতে করেছিলেন আর্নেস্টো চে গুয়েভারার ট্যাটু।
বাণিজ্যিক দাপটে খেলাধুলার জগতও এখন একটা ঘেরাটোপের মধ্যে চলে। দুনিয়া কাঁপানো ক্রীড়া সেলিব্রেটিরা সেকারণেই কোনও রাজনৈতিক বিষয়ে মত জানাতে থাকেন আড়ষ্ট। তাদের চলতে হয় কতগুলো নিয়মের মধ্যে। ম্যারাডোনা এসব তোয়াক্কা করতেন না। বাণিজ্যিক মোড়লদের চোখ রাঙানি এড়িয়ে ফিদেলের রাজনৈতিক মতাদর্শ অনেকবারই প্রচার করতে দেখা গেছে তাকে। ভুল হোক, ঠিক হোক ম্যারাডোনা তার চিন্তার জায়গায় ছিলেন স্পষ্টবাদী। রাখঢাক করতে দেখা যায়নি তাকে।
স্কিলের মুন্সিয়ানায় বিশ্বের সবচেয়ে রোমাঞ্চ ছড়ানো একজন ক্রীড়াবিদ তিনি। তবে ক্রীড়াবিদের পরিচয়ের গন্ডির বাইরে গিয়ে খেয়ালি, পরোয়া না করা চরিত্রের কারণে আলাদা হয়ে থাকবেন দিয়াগো। ফিদেলের চোখে, ‘ফুটবলের চে গুয়েভারা তিনি।’