একটা গ্রামের নাম একটা প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় বহন করে। কিন্তু নামটি যদি হয় অশ্লীল ও অসুন্দর তখন তা নিয়ে এলাকার কর্তাব্যক্তিদেরেউদাসীনতা নিয়েও প্রশ্ন জাগে সমাজে। একটা গ্রামের নাম যখন রুচিহীন হয় তখন মানুষ তার পরিচয় দিতে গিয়ে লজ্জাবোধ করে। আর এই বিষয়টি যখন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের চোখ এড়িয়ে যায় তখন এটি নিচকই দু:খজনক।
নেত্রকোনার একটি গ্রামের নাম চোরের ভিটা। এলাকাবাসীর মতে, ‘গ্রামের নামডা বললে মানুষ হাসে। এমন নাম বলতে ভালো লাগে না, লজ্জা লাগে। কয় বাপ-দাদা কি চোর আছিন? না অইলে এমন নাম কেরে? এইতার লাইগ্যা গ্রামের নামডা কইতে শরম লাগে। মামার বাড়িত গেলে, কোন জায়গায় বেড়াইতে গেলে মানুষ বাবার নাম, গেরামের নাম জিগায়।’
গ্রামের নাম পরিবর্তন চেয়ে বুধবার নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের সাবেক ছাত্র মোহাম্মাদ মাহবুবুর তালুকদার।
তিনি বলেন, পূর্বধলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের চোরের ভিটা গ্রামের নামকরণ করা হয় ১৯৬২ সালে। ওই সময়ের জরিপের সময় জমিদারের খাজনার বই হারিয়ে গেলে জমিদার ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের নাম দেন চোরের ভিটা। ১৯৯১ সালে গ্রামের নামের ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় ‘চোরের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। আমি নিজেও ওই স্কুলের ছাত্র। কিন্তু বিভিন্ন অফিস আদালতে গেলে, চাকরির আবেদন করলে তা নিয়ে মানুষ হাস্যরসের সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই নামটি বদলের জন্য মানববন্ধন করেছি। জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছি। নামটি পরিবর্তন চাই আমরা। পরিবর্তন করে বিজয়নগর করার জন্য দাবি জানাই।
একই গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা হালিম খান ও মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, এমন নামের কারণে মানুষ আত্মীয় করতে চায় না। বিয়েশাদীর ক্ষেত্রে ভালো এলাকায় বিয়েশাদী হয় না। আমরা খুব সমস্যায় আছি। দ্রুত গ্রামের নামটি পরিবর্তন চাই।
‘চোরের ভিটা’ পরিবর্তন করে বিজয়নগর করার দাবিতে সম্প্রতি গ্রামবাসী মানববন্ধন করেছেন।
পূর্বধলা উপজেলার চোরের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ‘চোরের ভিটা’ গ্রামবাসীর আয়োজনে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন গ্রামের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা হালিম খান, মাহবুব তালুকদার ও মোহাম্মাদ আলীসহ গ্রামের লোকজন।
মানববন্ধনে বক্তারা নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ‘চোরের ভিটা’ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বিজয়নগর রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান বলেন, নাম পরিবর্তনের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে একটি আবেদন পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।