স্বাস্থ্যের সাথে করোনা মহামারির ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির ওপর। অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে দু’মুঠো ভাত ও বস্ত্রের জন্য পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে উপকূলীয় অঞ্চলের শিশুরা দিন দিন ঝুঁকে পড়ছে শিশুশ্রমের দিকে।
ওদের যে সময়টা শিক্ষার আলোতে আলোকিত হওয়ার কথা ছিল সেই সময় কুয়াকাটার শুটকি পল্লীতে এখন কর্মব্যস্ত সময় পার করছে শিশুরা। দারিদ্রের কষাঘাতে অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে ওদের শৈশব। মহামারি করোনাভাইরাসের ফলে উপকূলীয় অঞ্চল কুয়াকাটায় প্রতিনিয়ত শিশু শ্রমে যুক্ত হওয়া ও বাল্যবিবাহের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে শিশুদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ অনিশ্চয়তার মধ্যে শিশুদের ভবিষ্যৎ।
জানা গেছে, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ না করা, অপরদিকে পরিবারের আর্থিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার শিশুরা যুক্ত হচ্ছে শিশু শ্রমে।
কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়ার শিশু শ্রমিক মেহেদি হাসান (১২) দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করে। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ রোদে শুকানো, নৌকা থেকে মাছ তোলা, মাছ কাটা থেকে শুরু করে সব কাজ করতে হয় তাকে। বিনিময় মিলছে সামান্য কিছু টাকা।
বেতনের কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পাই। এ বয়সে কেন কাজ করছ জানতে চাইলে সে বলে, পেটের দায়ে কাজ করতে আসছি।
মেহেদীর মতো অনেক শিশু শ্রমিক রয়েছে যারা এ শুটকি পল্লীতে কাজ করছে।
সরেজমিনে মহিপুর থানার গোড়াখালের শুটকি পল্লীতে মো: সুমন (১৩) নামের এক শিশু শ্রমিকে জিজ্ঞেস করলে সুমন জানায়, ‘ঘরে থাইক্কা যে মোরা ল্যাহা পড়া হরমু (করমু) হেইয়া মোগো কপালে নাই। মোগো ঘরে ভাত নাই। তাই বদলা (শ্রমিক) দিয়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পাই তা দিয়ে ঘরে চাউল কিনি’। সুমনের মতো হাজারও শিশুর স্বপ্নগুলো এভাবে নষ্ট হচ্ছে।
আরো দেখা গেছে, কোনো জেলেদের মুখে মাস্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলেরা ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়ে আসে এখানে। থাকার পরিবেশের অবস্থা শোচনীয়। শুটকি পল্লীর জেলেদের সঙ্গে থাকা দুই থেকে তিন বছরের বাচ্চাগুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠছে। এদিকে শুটকি পল্লী ছাড়াও বিভিন্ন হোটেল রেঁস্তোরায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত থাকতে দেখা যায় ওই অঞ্চলের শিশুদের।
উপকূলীয় মানব উন্নয়ন সংস্থার (সিকোডা) চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন মিরাজ মুসুল্লী বলেন, ‘জাতীয় শিশুশ্রম নীতি অনুসারে শিশুশ্রমের কারণ অনুসন্ধান, এর পেছনে আর্থ সামাজিক কারণগুলো খোঁজা, শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণের ঘাটতি কোথায় তা নির্ণয় করে সরকারের পাশাপাশি সচেতন মহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা স্থানীয় সংগঠন রুরাল ইনহ্যান্সমেন্ট অর্গানাইজেশনের (রিও) সভাপতি মাওলানা হাবীবুল্লাহ জানান, অর্থ সঙ্কটের সময় অনেক পরিবার খাদ্য যোগানের জন্য শিশুদেরকেও কাজে লাগিয়ে দেয়। আমাদের উচিত শিশুদেরকে কাজে না লাগানো।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক জানান, মহামারির সময় স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু শ্রম ও বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে। এগুলো রোধে আমরা সচেষ্ট আছি।