মৌলভীবাজারের রাজনগরের সোনাটিকি গ্রাম পূরুষ শূন্য। বিগত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সোনাটিকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পূর্বেই ওই এলাকার বিএনপি সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।
খবর পেয়ে কেন্দ্রে অবস্থানরত দায়িত্বশীলদের রক্ষার্থে পুলিশ এগিয়ে এলে তুমুল সংঘর্ষে রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শ্যামল বণিক, ওসি(তদন্ত) আবুল কালাম, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, এ.এস.আই সবুজ মিয়া, এ.এস.আই ইমাম হোসেন, কন্সটেবল কাউসার আলম সহ ১৪ জন গুরুতর আহত হয়।
গুরুতর আহত ওসি শ্যামল বণিক, ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম কন্সটেবল কাউসার আলম, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঐদিনই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় ওই ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রাজনগর সরকারী কলেজের প্রভাষক সেলিম আহমদ বাদী হয়ে সোনাটিকিসহ ৬টি গ্রামের মোট ৮০০ জনকে আসামী করে রাজনগর থানায় এসল্ট মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে গ্রেফতার আতঙ্কে ওই গ্রামগুলো পূরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
রাজনগর থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত ৩০ ডিসেম্বর রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সোনাটিকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ওই এলাকার সোনাটিকী, গজনাইকান্দি, সুপ্রাকান্দি, মিয়ারকান্দি, বড়পাথর ও পথেরগাঁও গ্রামের লোকজন ভোট দেন। ভোট গ্রহণ শেষে বিএনপি সমর্থক লোকজনের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে হট্টগোল শুরু হয়। এতে কেন্দ্র ও ভোট গণনার নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যালট বাক্স বিদ্যালয়ের দোতলায় নিয়ে নিচের কলাপসিবল গেট বন্ধ করে ভোট গণনা করা হয়।
এ সময় উপস্থিত বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ও হট্টগোলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার রাজনগর থানার ওসি শ্যামল বণিককে জানান। তাৎক্ষনিক ওসি শ্যামল বণিক ও ওসি(তদন্ত) আবুল কালামের নেতৃত্বে দুটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ঘটনাস্থলে যান। এসময় প্রিজাইডিং অফিসার ফলাফল ঘোষণার জন্য ফলাফল সিট হাতে নিয়ে নিচে আসেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরক্ষণেই ওই এলাকার বিএনপি সমর্থকরা কেন্দ্রের চতুর্দিকে পাকা সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। বিষয়টি পুলিশ আঁচ করতে পেরে মালামাল নিয়ে ফিরে আসার জন্য গাড়িতে উঠতে গেলেই বিএনপি সমর্থকরা পুলিশের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
এতে রাজনগর থানা ওসি শ্যামল বণিক, ওসি(তদন্ত) আবুল কালাম ও সহকারী প্রিজাংডিং অফিসার সহ মোট ১৪ জন গুরুতর আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ৫২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এসময় হামলা চালিয়ে পুলিশের দুটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। গুরুতর আহত ওসি শ্যামল বণিক সহ ৩জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকীদের মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় সোনটিকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রাজনগর সরকারী কলেজের প্রভাষক সেলিম আহমদ বাদী হয়ে ওই কেন্দ্রের ৬টি গ্রামের ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৮ শ’ জনকে আসামী করে রাজনগর থানায় এসল্ট মামলা (নং-২৮) দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এদিকে গ্রেফতার আতঙ্কে সোনাটিকীসহ ৬ গ্রামের মানুষ পূরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। রাতের বেলা কেউই বাড়িতে থাকছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় জনৈক ব্যাক্তি জানান, এখন বোরো ফসল আবাদের মৌসুম। এ এলাকার শতভাগ লোকজন ব্যুরো নির্ভরশীল কৃষক। কিন্তু গ্রেফতার আতঙ্কে কেউই বাড়িতে থাকছেন না কিংবা বোরো ফসলের মাঠে যাচ্ছেন না। এতে দরিদ্র কৃষকদের বোরো ফসল আবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে মহাবিপাকে রয়েছেন ৬ গ্রামের দরিদ্র কৃষক-কৃষাণীরা।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজনগর থানার ওসি(তদন্ত) আবুল কালাম বলেন, পুলিশ ঐদিন খবর পেয়ে কেন্দ্র ও কেন্দ্রে অবস্থানরত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের নিরাপত্তা দিতে গিয়েছিল। বিনা উসকানিতে ঐ এলাকার বিএনপি সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ ব্যাপারে এসল্ট মামলা হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ নিয়মিত টহলসহ জোরদার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।