শীত চলে এসেছে, তবে এখনো ঝেঁকে বসেনি। শীত এলে কানের সংক্রমণ বেড়ে যায়, বিশেষ করে শিশুদের। কানের সংক্রমণের অন্যতম উপসর্গ হলো কানে ব্যথা করা। যদি মনে হয় যে শিশু কানের ব্যথায় ভুগছে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এসময় তাকে স্বস্তি দিতে কিছু ঘরোয়া পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। এখানে কানের সংক্রমণ জনিত ব্যথা কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় দেয়া হলো।
ব্যথাময় কানকে উপরে রেখে ঘুমানো: কানের ব্যথা কমানোর একটি সহজ উপায় হলো- যে কান ব্যথা করে সেই কানকে উপরের দিকে রেখে ঘুমানো। কান ব্যথার আংশিক কারণ হলো কানে তরল জমা। এসময় ব্যথাময় কানের ওপর ভর দিয়ে ঘুমালে গ্রাভিটির কারণে তরল আরো বেড়ে যায় বলে কানের ব্যথাও বাড়ে, বলেন এনওয়াইইউ ল্যানগোনের মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল ইন্সট্রাক্টর তানিয়া ইলিয়ট। তিনি আরো বলেন যে, এসময় সুস্থ কানের ওপর ঘুমালে এমনটা ঘটে না, বরং ব্যথা কমে যায়।
নাককে ড্রেইন করানো: নাক ব্লক হয়ে গেলে কানে ব্যথা করতে পারে, কারণ কান থেকে তরল বের হয়ে যেতে পারে না। তাই বন্ধ নাককে পরিষ্কার করলে কানের ব্যথা কমতে পারে। ডা. ইলিয়ট বলেন, ‘ন্যাজাল স্যালাইন ড্রপস দিয়ে শিশুর নাককে সাকশন করলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে নাক পরিষ্কার হবে। কান, নাক ও গলা পরস্পরে সংযুক্ত বলে নাক পরিষ্কার করলে কানের চাপ কমে যাবে।’ নাক পরিষ্কারের প্রক্রিয়াটি শিশুরা হয়তো পছন্দ করবে না, কিন্তু এতে কানের ব্যথা কমবে।
গরম সেঁক দেয়া: ব্যথাময় কানে গরম সেঁক দিলে ব্যথা কমবে। মিশিগানের অ্যান আরবারে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সি.এস. মট চিলড্রেন’স হসপিটালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানের ব্যথা উপশমে গরম সেঁকের কার্যকারিতা পরীক্ষিত সত্য। একটি পরিষ্কার কাপড় কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে সংক্রমিত কানের ওপর ধরে রাখুন। এতে ব্যথা কমবে ও আরাম পাওয়া যাবে। বেশি গরম পানি ব্যবহার করবেন না, এতে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
অনিয়ন কমপ্রেস ব্যবহার করা: গবেষণা ধারণা দিচ্ছে যে পেঁয়াজের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল পাওয়ার কানের সংক্রমণ প্রশমিত করতে পারে। ২০১৮ সালে সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত গবেষণায় ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের গবেষকরা দেখেছেন- পেঁয়াজের নির্যাস ল্যাবরেটরি কন্ডিশনে রেজিস্ট্যান্ট টিবি ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুর গ্রোথ থামাতে পেরেছে। একটি সতেজ পেঁয়াজকে কেটে পরিষ্কার কাপড়ে মুড়িয়ে সংক্রমিত কানের ওপর ৫-১০ মিনিট ধরে রাখুন। এতে সংক্রমণটি দুর্বল হবে ও ব্যথা কমবে।
জলপাই তেল ব্যবহার করা: কানের সংক্রমণের একটি পুরোনো ঘরোয়া চিকিৎসা হলো কানে জলপাই তেলের (অলিভ অয়েল) ব্যবহার। ডা. ইলিয়ট বলেন, ‘ছোট ছোট গবেষণায় দেখা গেছে, জলপাই তেল কানের ব্যথা কিছুটা কমাতে পারে। নিজে নিজে জলপাই তেল বানিয়ে ব্যবহার করবেন না, এতে কানের ভেতরে বাহ্যিক কণা ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কানের ব্যথা প্রশমনে ভালো ম্যানুফ্যাকচারারের জলপাই তেল ব্যবহার করুন।’
ওটিসি ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ানো: ওটিসি ওষুধ হলো সেসব ওষুধ যা কিনতে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন হয় না। সময় পরিক্রমায় বেশিরভাগ কানের সংক্রমণ নিরাময় হয়ে যায়, কিন্তু সংক্রমণটির স্থায়িত্ব পর্যন্ত কানে ব্যথা করতে পারে। এসময় শিশুর কানের ব্যথা উপশম করতে ওটিসি পেইনকিলার আইবুপ্রোফেন বা প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারেন। ডা. ইলিয়ট বলেন, ‘আইবুপ্রোফেনের মতো প্রদাহ প্রশমনকারী ওষুধ সংক্রমণের প্রদাহ, ফোলা ও ব্যথা কমাতে পারে।’