বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ না পেয়ে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মোহাম্মদ সজীব হোসেন নামের এক যুব ক্রিকেটার। তিনি জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৫, ১৭ ও ১৯ দলের খেলোয়াড় ছিলেন।
রোববার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে খবর পেয়ে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সজীবের এমন চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না বাংলাদেশ জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। তবে তিনি ক্রিকেটারদের প্রতি এমন কাজ করার আগে পরিবার এবং প্রিয়জনদের সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে অনুরোধ করেছেন।
নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সজিবের ছবি পোস্ট করে মুশফিক ক্যাপশনে লিখেছেন, আমরা সবাই ক্রিকেটের খেলা, তবে মনে রাখব ক্রিকেটের বাইরেও জীবন রয়েছে। দেশের একজন সম্ভাব্য প্রতিভাবান ক্রিকেটারের আত্মহত্যার কথা শুনে গভীরভাবে দুঃখ পেলাম-মোহাম্মদ সজীব।
যাই হোক, আমি সবাইকে অনুরোধ করি যে এই জাতীয় কাজ করার আগে আমাদের পরিবার এবং প্রিয়জনদের সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করুন। আত্মহত্যা কোনো সঠিক পথ নয়, আল্লাহ আমাদের জন্য সমস্ত পরিকল্পনা করেছেন এবং তার পরিকল্পনায় আমাদের বিশ্বাস করা উচিত।
বিদেহী আত্মা ও তার পরিবারের জন্য দোয়া রইল। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। অল্প সময়েই চলে গেছে…
সাম্প্রতিক সময়ে সজীব বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপে খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অংশগ্রহণের জন্য সব পরীক্ষাও দিয়েছিলেন তিনি। গত ১৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপে উত্তীর্ণ খেলোয়াড়দের তালিকায় প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় তার নাম না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েন।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) দিনগত রাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রোববার বিকেলে পরিবারের ইচ্ছায় তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে সন্ধ্যায় নিজ গ্রামেই তার মরদেহ দাফন করা হয়।
যুব ক্রিকেটার সজীব হোসেনের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মোরশেদ আলীর ছেলে। সজিব এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের খেলোয়াড় হয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। ভারতের বিপক্ষে ব্যাট করে সেই ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ওই ম্যাচে দলের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ছিলেন তিনি।
সজীব হোসেনসহ ৪৬ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে বিকেএসপিতে ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছিল এ বছরের প্রথম দিকে। পরে সেখান থেকে বাছাই করে ২৮ জনের একটি দল ঠিক করে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করা হয়। ২৮ জনের মধ্য থেকে বাছাই করে ১৫ জনের একটি চূড়ান্ত দল গঠনের কথা জানিয়েছিলেন টিম ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন। কিন্তু ভালো পারম্যান্স সত্বেও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলার জন্য সজিব হোসেনকে রাখা হয়নি বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
সজীব হোসেনের চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে এর আগে সজিব শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভালো খেলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ভালো পারফরম্যান্স থাকা সত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় সজিবসহ অনেককেই আসন্ন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সুযোগ না দিতে প্রশিক্ষণের বাইরে রাখা হয়। এ কারণে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন সজিব। কিন্তু বাড়ির কাউকে সেটা বুঝতে না দিয়ে রাতে নিজের শয়নকক্ষে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরদিন সকালে সজিবের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের জানালা দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেওয়া হয়।
রাজশাহীর দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসমত আলী জানান, খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে ঝালুকা গ্রামে গিয়ে ক্রিকেটার সজীব হোসেনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পারিবারের ইচ্ছায় ময়না তদন্ত ছাড়াই বিকেলে মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় তার মরদেহ দাফন করা হয়ে গেছে। তবে এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে বলেও জানান দুর্গাপুর থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে, খবর পেয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের পুঠিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।