‘যদি ক্ষতির কারণ লজ্জা হয়, তাহলে আর লজ্জা নয়’ স্লোগানে ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যাপ। ধীরে ধীরে কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। মূলত নারীদের স্তন ও জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া থেকে সচেতন করতেই এই সংগঠনের যাত্রা। ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম ফর উইমেন, সংক্ষেপে ক্যাপ।
সংগঠনটি শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পঞ্চম বর্ষপূর্তি পালন করেছে। এর মধ্য দিয়ে ক্যাপ ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করল। দিবসটি উৎসবমূখর পরিবেশে পালন করেছে ক্যাপ কুষ্টিয়া জোন। এ সময় জোনের সভাপতি রিয়াদুস সালেহীনের নেতৃত্বে ‘Be Aware, Make Awareness’ স্লোগানে দিনব্যাপী আয়োজন সম্পন্ন হয়। সামাজিক সচেতনতায় মাস্ক বিতরণ, বৃদ্ধাশ্রমে মায়েদের সঙ্গে সচেতনতায় ক্যাম্পেইন ও ভোজনের আয়োজন করে।
সংগঠনটির দেওয়া তথ্য মতে, সারাদেশে ৫টি ইউনিট রয়েছে তাদের। এতে প্রায় এক হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্চেন মায়েদের সুরক্ষা সেবায়। পড়াশুনার পাশাপাশি এ সেবামূলক কাজে অংশ নিয়ে তৃপ্ত তারা। কুষ্টিয়া জোনের শিক্ষার্থীরা এ পর্যন্ত ৫৮টি উঠান বৈঠক ও সচেতনতা ছড়িয়ে দিয়েছে প্রায় ৫০ হাজার নারীদের মাঝে। গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে এ পর্যন্ত তারা ৫০০ স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়েদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পাশে থেকে সীমিত সাধ্যের মধ্যে সেবা, নির্ভয় সচেতনতায় কাজ করে যাচ্ছে নিরলস।
দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন এই সংগঠনে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ, আলোচনা সভার আয়োজন করে সংগঠনটি। যেন শিক্ষার্থীরা এ সম্পর্কে সচেতন হয় ও অন্যকে সচেতন করতে পারেন। ক্যাপের কার্যক্রম শুধু বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রায়ই বিভিন্ন গ্রামে উঠান বৈঠক করে তারা। যার মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের এই দুই ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করেন।
সংগঠনটির স্বপ্ন দেখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র মুসা করিম রিপন। তখন তিনি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা এই তরুণ জানতে পারেন, তার দাদি জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত। এতদিন তিনি লজ্জায় কাউকে বলেননি। মুছা করিম যখন দশম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন তার মামীও স্তন ক্যান্সারে মারা যান বলে জানতে পারেন। সেই থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ক্যাপের যাত্রা শুরু করেন তিনি।
কুষ্টিয়া এন এস রোডে পথচারী ও দিনমজুরদের মাঝে ১ হাজার মাস্ক বিতরণ ও ক্যান্সার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন তারা। মাস্ক বিতরণ শেষে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজের সামনে ‘উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামক বৃদ্ধাশ্রমে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার সচেতনতা ক্যাম্পেইন ও দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়।
ক্যাম্পেইনে আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, ক্যাপের কো-ফাউন্ডার মুসা করিম রিপন, কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মাহাদী, ক্যাপ কুষ্টিয়া জোনের সাবেক সভাপতি সালমান শাহাদাত, কুষ্টিয়া জোনের সাধারণ সম্পাদক তাজমিন সুলতানা মিমি, অফিস সহকারী জেরিন তাসনিম ভাবনা, শাহিনা সুলতানা সিনজুসহ জোনের স্বেচ্ছাসেবকরা অংশ নেন।
এ বিষয়ে ক্যাপ কুষ্টিয়া জোনের সভাপতি রিয়াদুস সালেহীন বলেন, ‘সচেতনতা ছড়িয়ে যাক পৃথিবীর সবখানে। করোনা কেটে গিয়ে সুস্থ হয়ে উঠুক সবাই। ক্যাপের পথচলায় সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।