শীতের মৌসুমে যশোর শহরের ছিন্নমূল মানুষের রাত কাটে অবর্ণনীয় কষ্টে। বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকা ঘরহীন মানুষের। এসব সহায়-সম্বলহীনদের অনেকেই শুয়ে পড়ে সড়কে, ফুটপাতে অথবা ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে। শীত থেকে বাঁচার মতো ন্যূনতম গরম কাপরও নেই অনেকের। কেউ ব্যক্তিগত ও সংঘের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও ছিন্নমূল মানুষের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়।
ছিন্নমূল মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট লাঘবে যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটনায় একটি প্রতীকী গাছ স্থাপন করা হয়েছে। গাছের নাম দেয়া হয়েছে ‘শীত নিবারণ বৃক্ষ।’ এই বৃক্ষের থিম হলো- সচ্ছল মানুষের ব্যবহৃত পুরানো কাপড়ে হতদরিদ্রের শীতনিবারণ। শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তাদের ব্যবহৃত ‘অপ্রয়োজনীয়’ কাপড় গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখে যাচ্ছেন। সেখান থেকে শীতার্ত মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিচ্ছেন পছন্দের কাপড়। শীত নিবারণ বৃক্ষে কেউ দিয়ে খুশি, আবার অনেকে পেয়ে খুশি। ব্যতিক্রমী মানবিক এই উদ্যোগটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বনিফেস নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ এ উদ্যোগে নিয়েছে।
গ্রুপের উদ্যোক্তা বেলাল হোসেন বনি জানান, গত ২৪ নভেম্বর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় ‘শীত নিবারণ বৃক্ষ’ স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় দেড় মাসে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। শীতের শেষ পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগিতায় আমরা মুগ্ধ হয়েছি। তাদের ব্যবহৃত ‘অপ্রয়োজনীয়’ কাপড় শীতার্তদের জন্য দান করতে পেরে যেমন খুশি হচ্ছে, তেমনি শীতার্ত ছিন্নমূল মানুষও বেজায় খুশি।
তিনি আরো জানান, অনেক প্রতিষ্ঠান শীতার্তদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করেন শীতের শেষে। এতে প্রকৃতপক্ষে ছিন্নমুল মানুষের কষ্ট লাঘব হয় না। বিষয়টি আমাদের নাড়া দেয়। এরপর বনিফেস নামের ফেসবুক গ্রুপে আমরা সিদ্ধান্ত নিই শীতার্তদের জন্য কিছু করার। এরপর সিরাজুল ইসলাম মৃধা, জাহিদুল ইসলাম জাদু, আল মামুন শাওন, তানভীর রহমান, মোহাম্মদ জুয়েল, একে সুমন, আশিকুর রহমান শিমুল, আসাদুজ্জামান শাওন, রাজু আহমেদ মিলে আলোচনা করে ‘শীত নিবারণ বৃক্ষ’ থিমটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমাদের গ্রুপে ৩০ জন সদস্য আছে।
বেলাল হোসেন বনি বলেন, শুরুতে অনেকে এটা নিয়ে ব্যঙ্গ করেন। কিন্তু পরবতীতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। শীত নিবারণ বৃক্ষের প্রধান সহায়ক সব শ্রেণী পেশার মানুষ। তাদের দানেই হতদরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুঁটছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ব্যবহৃত পোশাক দান করছেন। তবে দাতাদের বেশিরভাগ নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক। অনেকে রাতের আধারে শীত নিবারণ বৃক্ষের ডালে পোশাক রেখে যাচ্ছেন।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন এখানে অসংখ্য মানুষ কাপড় জমা দিচ্ছে। আবার অনেকে নিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্যটি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি নিজের ব্যবহৃত পোশাক দান করেছি। এমন মানবিক উদ্যোগ সবখানে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।
পৌরসভার একজন কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শীতনিবারণ বৃক্ষের খবর পেয়েছি। তারপর নিজে এসে দেখেছি। উদ্যোগটি ভালো লেগেছে। এজন্য নিজেও দান করেছি।
একাধিক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, শীত নিবারণ বৃক্ষের জন্য আমরাও পোশাক দিয়েছি। আমাদের ব্যবহৃত পোশাকে গরীব মানুষের শীত নিবারণ হচ্ছে, এটা খুব ভালো লাগছে।