প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে আর্জেন্টিনা। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তি বাতিল করেছে লিওনেল মেসির গোল। নইলে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারত আর্জেন্টিনা। এমন ম্যাচে বিতর্ক এড়িয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি ব্রাজিলিয়ান রেফারি রাফায়েল ক্লস।
মেসির গোল বাতিল করে দেন রেফারি
মেসির গোল বাতিল করে দেন রেফারিছবি: টুইটার
ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে রেফারি হিসেবে ভালো নামডাক রয়েছে ক্লসের। ক্যাম্পেনাতো পাউলিস্তা চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি সর্বোচ্চসংখ্যক পুরস্কার পাওয়া রেফারিদের একজন। এই ক্লস-ই লা বোমবোনেরা স্টেডিয়াম থেকে মাঠ ছেড়েছেন বিতর্ক নিয়ে। বেশি কথা হচ্ছে মেসির গোল বাতিল হওয়া নিয়ে।
এ ছাড়া আর্জেন্টিনার বক্সে নিকোলাস ওতামেন্দির ‘হ্যান্ডবল’ এড়িয়ে যাওয়া ভালোভাবে নেয়নি প্যারাগুয়ে। এজেকিয়েল পালাসিওসকে করা অ্যানহেল রোমেরোর মারাত্মক আঘাতও সৃষ্টি করছে বিতর্ক।
মাঠে কাতরাচ্ছেন প্যালাসিওস
মাঠে কাতরাচ্ছেন প্যালাসিওসছবি: এএফপি
হাসপাতালে যেতে হয়েছে পালাসিওসকে। তাঁকে হয়তো বেশ কিছুদিন থাকতে হবে মাঠের বাইরে। অথচ এই কড়া ট্যাকলে রেফারি কেন ভিএআর–এর সাহায্য নিয়ে রোমেরোকে লাল কার্ড দেখাননি, সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রোমেরোকে তিনি কোনো কার্ডই দেখাননি!
তবে ৫৬ মিনিটে দলীয় সমন্বয় থেকে দারুণ এক আক্রমণের ফসল হিসেবে মেসির তুলে নেওয়া গোলটি বাতিল করাই আর্জেন্টিনাকে পোড়াবে বেশি। গোল হওয়ার পথে নিজেদের অর্ধে আর্জেন্টিনার নিকোলাস গঞ্জালেস ফাউল করেছিলেন রোমেরোকে—ভিএআর প্রযুক্তিতে তা ধরা পড়ার পর গোলটি বাতিল করে দেন রেফারি।
ম্যাচের ৫৬ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের সময় ফাউলটি হয়েছিল। এর ২৭ সেকেন্ড পর গোলটি হয়েছে। এ সময়ে আটটি পাস খেলেছে আর্জেন্টিনা দল। নবম পাসে গিয়ে গোল করেন মেসি।
প্যারাগুয়ের কোনো ফুটবলার এর মধ্যে বল ছুঁতে কিংবা দখলে নিতে পারেননি। সেটি পারলে গোলটি টিকে যেত। গোল বাতিল হওয়ার পর আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি রেফারির ওপর ক্ষোভ উগরে দেন ডাগ আউট থেকে, ‘সমস্যাটা কোথায়? লজ্জাজনক, লজ্জাজনক!’
রেফারি গোল বাতিল না করলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত আর্জেন্টিনা
রেফারি গোল বাতিল না করলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত আর্জেন্টিনাছবি: এএফপি
লুকাস মার্তিনেজের ফাউল থেকে পাওয়া পেনাল্টিতে গোল পেয়ে এগিয়ে গিয়েছিল প্যারাগুয়ে। ফাউলটি হওয়ার পর রেফারির কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মেসি। প্যারাগুয়ে বক্সের কাছাকাছি মেসিও ঠিক একই ফাউলের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু তা রেফারির চোখ এড়িয়ে যায়। পালাসিওসের ফাউলটি নিয়েও ক্লসের মুণ্ডুপাত করতে পারেন আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা। প্রচণ্ড গতিতে অনেকটা উড়ে এসে পালাসিওসকে পেছন থেকে আঘাত করেন রোমেরো। তাঁর হাঁটুর আঘাতে মাটিতে পড়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন পালাসিওস।
কিন্তু এ যাত্রায় ভিএআর-এর সাহায্য নেননি রেফারি। রোমেরোকে তিনি কোনো কার্ডই দেখাননি, একটু পর অন্য এক সামান্য ফাউলে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান ক্লস। ম্যাচ শেষেও ক্ষোভ লুকিয়ে রাখতে পারেননি স্কালোনি, ‘আমরা এমন একজনকে (পালাসিওস) হারিয়েছি, যাকে হয়তো মাসখানেক মাঠের বাইরে থাকতে হবে। বাতিল হওয়া গোলের আগে অনেকগুলো পাস খেলা হয়েছে। এমন ফুটবল কেউ পছন্দ করে না। আমি মনে করি ভিএআর ব্যবহারের সঠিক দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। খেলার মাঝে এমন আরও অনেক মুহূর্ত ছিল যখন ভিএআর ব্যবহার করা যেত। কিন্তু তা করা হয়নি। আমি ভালো-মন্দ নিয়ে বলছি না তবে সঠিক দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। আমাদের বাতিল হওয়া গোলটিকে আমি বৈধ বলেই মনে করি।’
আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি
আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনিছবি: টুইটার
এ ছাড়া প্যারাগুয়ের পেনাল্টি নেওয়ার সময় তাদের দলের এক খেলোয়াড় (ফাবিয়েন বালবুয়েনা) বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, পেনাল্টিটি পুনরায় নেওয়া উচিত ছিল কিন্তু সেটি করেননি রেফারি—এমন অভিযোগও করেন স্কালোনি। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, ক্লসকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্কে কয়েক দিন গরম থাকবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।