১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন মো. রওশন আলী। অবসর নেন ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ইচ্ছে ছিল এমএ পাস করার। কিন্তু পেশাগত ও সাংসারিক ব্যস্ততায় তা আর হয়ে ওঠেনি। অবসর নেওয়ার এক যুগ পর ৭২ বছর বয়সে মাস্টার্স অব সোশ্যাল সায়েন্স (এমএসএস) পাস করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি।
রওশন আলীর বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের বান্নাইপাড়া গ্রামে। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে আছে। বড় ছেলে ফারুক ই আজম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে পাবনার একটি কলেজে বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেব কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে মো. সাইফুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি কলেজে অধ্যয়ন শেষে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত আছেন।
রওশন আলী ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সুজানগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করেন ১৯৬৬ সালে। ১৯৭০ সালে পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সুজানগরের শহীদ দুলাল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরে তিনি সহকারী শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষক হন।
শিক্ষকতা করার ফাঁকেই পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ১৯৮৩ সালে ডিগ্রি পাস করেন। এরপর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি রওশন আলী। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নিলেও পড়াশোনা শেষ করতে না পারার কষ্ট রয়ে যায় তার মনে। পরে সিদ্ধান্ত নেন যেভাবেই হোক এমএ পাস করবেন তিনি। সে ইচ্ছাশক্তির জোরে ফের পড়াশোনা শুরু করেন মো. রওশন আলী।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসএসের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হন রওশন আলী। এ বছর চূড়ান্ত পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৩৫ পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। গত রোববার (৮ নভেম্বর) পরীক্ষার ফল জানতে পারেন রওশন আলী।
বৃদ্ধ বয়সেও লেখাপড়া করে এমএসএস পাস করায় রওশন আলীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার স্ত্রী হোসনে আরা পারভীন, দুই ছেলে, নাতি-নাতনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্থানীয়রা।
মো. রওশন আলী বলেন, ‘সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমি শুধু চেষ্টা করেছি। মানুষ যদি চেষ্টা করে আর আল্লাহ যদি চান, তাহলে জীবনে সফল হওয়া সম্ভব। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান অর্জনের কথা বলা হয়েছে। জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।’ ভবিষ্যতে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করতে চান বলেও জানিয়েছেন রওশন আলী।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সের সমন্বয়কারী এবং সাবেক প্রক্টর ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘রওশন আলী প্রমাণ করেছেন মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। লেখাপড়ার যে কোনো বয়স নেই, তার জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি। সবার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন রওশন আলী।’