‘ফুটবল খুব সহজ একটা খেলা। যেখানে ২২ জন খেলোয়াড় একটা ফুটবলের পেছনে ৯০ মিনিট ধরে দৌড়ঝাপ করে। সবশেষে ফল… জার্মানির জয়।’- গ্যারি লিনেকারের বিখ্যাত এই উক্তিকে যেন আইপিএলে সত্য প্রমাণ করার দায়িত্ব নিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে সফল দল মুম্বাইয়ের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি। গত সাত মৌসুমের মধ্যে চারবারই শিরোপা নিজেদের ঘরে নিয়েছে দলটি। তাদের ফাইনালে ওঠা মানেই, ধরে রাখা যায় শিরোপার বরাদ্ধ তাদের ঘরেই।
এবারও দুর্দান্ত প্রতাপ দেখিয়ে ফাইনালে উঠেছে দলটি। রাউন্ড রবিন লিগের প্রথম ধাপে যেমন শীর্ষে থেকেছে, কোয়ালিফায়ারেও দিল্লি ক্যাপিটালসকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। ত্রয়োদশ আইপিএলের ফাইনালেও কী তাই গ্যারি লিনেকারের কথা সত্যি প্রমাণ করে শিরোপা নিজেদের ঘরে নিবে রোহিত শর্মার দল? নাকি প্রথম সুযোগে বাজিমাত করবে শ্রেয়াস আইয়ারের দল দিল্লি?
দুবাইয়ে অবশ্য মুম্বাইকে চমকে দেয়ার লক্ষ্যেই ফাইনালে মাঠে নামবে দিল্লি। দুই ফাইনালিস্টের মধ্যে জয়-পরাজয়ের ঘেরাটপে চমকে দেয়ার কথা তোলা বেমানান। যোগ্য হিসেবেই শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি দুই দল। কিন্তু দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যান যখন একপাক্ষিক, তখন অপর পক্ষের জয় চমকে ওঠার গল্পই সামনে নিয়ে আসে।
বায়ো বাবলের অদ্ভুত সময়ে প্রথমবারের মতো সৌভাগ্যকে আপন করে ফাইনালে উঠেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। তবে আসরের শুরুতে যতটা ভালো খেলেছিলো দলটি, শেষদিকে এসে যেন ততটাই ছন্নছাড়া। সর্বশেষ সাত ম্যাচে তো হারই পাঁচটি। যার মধ্যে অপর ফাইনালিস্ট শক্তিশালী মুম্বাইয়ের বিপক্ষেই তিনটি। এবারের আসরে মুম্বাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে একটি জয়ও পায়নি শ্রেয়াসের দল।
আবুধাবিতে দুই ফাইনালিস্টের প্রথম সাক্ষাতে কুইন্টন ডি কক এবং সূর্যকুমার যাদবের ঝড়ো ফিফটিতে নয় উইকেটের সহজ জয় দেখে মুম্বাই। পরের ম্যাচে জাসপ্রিত বুমরাহ এবং ট্রেন্ট বোল্টের তোপে মুম্বাইকে মাত্র ১১১ রানের লক্ষ্য দেয় দিল্লি। সেটি টপকাতে ইশান কিষাণের ঝড়ো ফিফটিই যথেষ্ট ছিল। দুই ফাইনালিস্টের সর্বশেষ সাক্ষাৎ কোয়ালিফায়ার ম্যাচে। যেখানে মুম্বাইয়ের ২০০ রানের জবাবে ৫৭ রান দূরে থামে দিল্লির ইনিংস।
ফলে খালি চোখে আরেকটি ফাইনালের সামনে দাঁড়িয়ে ফেভারিট তকমা নিয়ে শুরু করবে মুম্বাই। এছাড়াও দলটিতে ম্যাচ উইনিং এবং শিরোপার স্বাদ পাওয়া ছয়জন ক্রিকেটার রয়েছেন। যাদের মধ্যে এক রোহিতই শিরোপা জিতেছেন ৫ বার। এছাড়াও টপ পারফরমার কিয়েরন পোলার্ড, হার্দিক পান্ডিয়া, বুমরাহ, ক্রুনাল পান্ডিয়াদের শিরোপা জয়ের স্বাদ রয়েছে।
অপরদিকে দিল্লির কোনো ক্রিকেটার নেই যাদের আইপিএলের শিরোপা স্বাদ নেওয়া হয়েছে। এমনকি এবারের আসরে ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সও করতে পারেননি শিখর ধাওয়ান ও কাগিসো রাবাদা ছাড়া কেউ। ধাওয়ান রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় এবং রাবাদা উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন প্রথম স্থানে। এছাড়া দলটির এক্স ফ্যাক্টর রিষভ পান্ত, শিমরন হেটমায়াররা এবার আছেন নিজেদের ছায়া হয়ে। অধিনায়ক শ্রেয়াসেরও রয়েছে ধারাবাহিকতার অভাব।
কিন্তু দিনশেষে টি-টোয়েন্টি মাত্র ৪০ ওভারের খেলা। যেখানে ওই নির্দিষ্ট সময়ে যে দল ভালো খেলবে শিরোপা আসবে তাদের ঘরেই। দিল্লি তাই দুবাইতে আজ ওই নির্দিষ্ট ৪০ ওভারের খেলায় সেরা অবস্থানেই থাকতে চায়।
তবে দলটির সামনে আরেকটি আশা হয়ে আছে, মুম্বাইয়ের শিরোপা জয়ের ধারাবাহিকতা। মুম্বাই এখন পর্যন্ত টানা দুই মৌসুমে শিরোপা নিজেদের করতে পারেনি। যদি সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে তবে প্রথম ফাইনালে বাজিমাত ঘটিয়ে শিরোপা উৎসবে মাততে পারবে দিল্লির ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। নয়তো চেন্নাই সুপার কিংসের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জিতে আইপিএলের চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের নাম পঞ্চমবারের মতো রাঙিয়ে তুলবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।