নওগাঁর রাণীনগরে দুই সন্তানের জননীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। রোববার রাতে ওই গৃহবধুকে বেধড়ক মারপিটের একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন কৌশলে গলায় দড়ি দিয়ে ঘরের তারের সাথে ঝুলিয়ে রেখে লোক দেখানোর ভান করে। পরদিন সকালে তারা গলা থেকে দঁড়ি খুলে চিকিৎসার জন্য রাণীনগর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
খবর পেয়ে রাণীনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে গলায় দঁড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করছেন সবাই।
জানা গেছে, উপজেলার গোনা ইউনিয়নের পিরেরা গ্রামের নবাব আলী সরদারের মেয়ে নাসিমা আক্তারের (২৫) সাথে ২০০৪ সালে একই উপজেলার পশ্চিম ঘোষগ্রামের আতুল প্রাংয়ের ছেলে এলাহী বক্সের বিয়ে হয়। একসময় তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে অন্য এক মেয়ের সাথে এলাহী বক্সের সম্পর্ক গড়ে উঠলে গৃহবধু নাসিমা তার প্রতিবাদ করেন।
এ নিয়েই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হওয়ায় এলাহী তার স্ত্রী নাসিমাকে প্রায়ই মারপিট করতো। এসব ঘটনায় পারিবারিকভাবে কয়েকবার শালিশ বৈঠকও হয়েছে। তবে বৈঠক হলেও শান্তিপূর্ণ কোনো সমাধান হয়নি।
গত রোববার গৃহবধূকে বেধড়ক মারপিটের একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়ে নাসিমা। এরপর স্বামী এলাহী ও তার পরিবারের লোকজন কৌশলে নাসিমার গলায় দঁড়ি দিয়ে ঘরের তীরের সাথে ঝুলিয়ে রাখে এবং পরে তারা গলা থেকে দঁড়ি খুলে চিকিৎসার নামে রাণীনগর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
পরে হাসপাতাল থেকে গৃহবধূর লাশ বাড়িতে ফেলে রেখে বাড়ির সকল সদস্য পালিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
এ ব্যাপারে গৃহবধু নাসিমা বেগমের ভাতিজা ও গোনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কোরবান আলী অভিযোগ করেন, আমার ফুফু’কে বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে পারিবারিকভাবে কয়েকবার বৈঠকও হয়েছে। এক সময় আমরা জানতে পারি এলাহী অন্যত্র আরো একটি বিয়ে করেছে। এরপর থেকে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। আমার ধারণা রোববার রাতে কোনো এক সময় আমার ফুফুকে পিটিয়ে হত্যা করে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
রাণীনগর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ তারিকুল রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত রির্পোট পেলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে নিহত গৃহবধূর স্বজনরা দাবি করছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাণীনগর থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।