একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আগামীকাল সোমবার নতুন করে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত বৃহস্পতিবার বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ গ্রহণের পর সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় শপথ নেবে নতুন মন্ত্রিসভা। এই মন্ত্রিসভা ৪৫ থেকে ৫০ সদস্যের হতে পারে। এর মধ্যে কমবেশি ৩০ জনের মতো মন্ত্রী, ১৫ জনের মতো প্রতিমন্ত্রী এবং পাঁচজনের মতো উপমন্ত্রী থাকতে পারেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের বছরখানেক পরে মন্ত্রিপরিষদের আকার বাড়িয়ে ৫৫-৬০ করা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ নিয়ে ছুটির দিনেও ব্যস্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও এ বিভাগের প্রায় সবগুলো দফতরই ছিল খোলা। শপথের জন্য আমন্ত্রণ ও নতুন মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন নিয়ে কাজ করছেন এ বিভাগের কর্মকর্তারা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জিতে ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিপরিষদে এবার সৎ, সাহসী, দক্ষ ও পরীক্ষিতরাই যুক্ত হচ্ছেন। একই সাথে শিক্ষিত তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমর্যাদার কয়েকজন সংসদ সদস্যের প্রথমবার নতুন মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার একই সাথে যারা দলের জন্য বিভিন্ন সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন অথচ তারা সংসদ সদস্য নন, এমন নেতাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হিসেবে সভায় স্থান দিতে পারেন শেখ হাসিনা।
এ দিকে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ নিয়ে ছুটির দিনেও ব্যস্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শপথের জন্য আমন্ত্রণ ও নতুন মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন নিয়ে কাজ করছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা। কয়েক দফা মিটিংও করেছেন তারা। এরই মধ্যে সচিবালয়ে নিজ দফতরে এসেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এ ছাড়াও এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় সচিবরাও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এসেছেন। তারা নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের ফাইল তৈরির কাজসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো সম্পন্ন করে রাখছেন।
এর আগে গত শুক্রবারও খোলা ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যেখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিস করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবস্থান করছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সেখানে থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে যান। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক বৈঠকে তিনি যোগ দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে বলে আশা করছি। এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের। তাই এ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো গুছিয়ে রাখার জন্যই সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করছি। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব নাজমুল হক সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি টিম বঙ্গভবনে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, বঙ্গভবনের দরবার হলে আয়োজিত নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থাপনার তদারকি করতেই তারা বঙ্গভবনের গেছেন।
এই মুহূর্তে কতজন মন্ত্রীর ফাইল তৈরির কাজ চলছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানাতে পারেনি কেউই। তবে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন ও পুরনো মিলিয়ে ৪৫ থেকে ৫০ জনের একটি নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে বছরখানেক পরে মন্ত্রিপরিষদের আকার বাড়িয়ে ৫৫-৬০ করা হতে পারে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য আমরা প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো করছি। প্রতি মুহূর্তেই আপডেট আসছে। নতুন মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে শপথ নেয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা যোগাযোগ করে আমন্ত্রণ জানাবেন। তবে তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তালিকা এখনো তাদের কাছে আসেনি।
নতুন মন্ত্রীদের গাড়ি সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি যানবাহন অধিদফতর। পরিবহন কমিশনার সৈয়দ আবদুল মমিন গণমাধ্যমকে জানান, মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের যানবাহন ও চালক নিশ্চিতের জন্য কাজ করছি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। আশা করছি, সোমবার সকালের মধ্যে সব চূড়ান্ত হবে।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে ১০ ভাগের ৯ ভাগ সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ দশ ভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবেন দেশের নতুন সরকার। শপথ নেয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী ২৮৯ জন সংসদ সদস্য শপথ নেন। দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ। ওই দিন বিকেলে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে রাষ্ট্রপতির সম্মতি চান। রাষ্ট্রপতি তাকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সম্মতি দেন।
ওই দিনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে প্রজ্ঞাপনটির গেজেট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের ৩ দফা অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সাথে সাথে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যের। তবে নির্বাচনের আগে টেকনোক্র্যাট চার মন্ত্রীকে বাদ দেয়া হয়। এই মন্ত্রিসভা এখনো বহাল রয়েছে।