স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি বরাবর অংশ নিলেও জাতীয় নির্বাচনের পর দলটির সেই অবস্থানে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে। দলটি সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে যে অনিয়ম, জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে, তাতে বিদ্যমান ব্যবস্থায় অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যেতে আগ্রহী নয়। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। এই মুহূর্তে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়েছে তা দেশে-বিদেশে জানাতে ব্যস্ত রয়েছে।
দলের সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, স্থানীয় নির্বাচনের সাথে ক্ষমতার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই। সেই অবস্থান থেকে অতীতে স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা। জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের সাজানো নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি তাদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে এটা সত্য। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের রাজনীতি সক্রিয়ভাবেই চালিয়ে যেতে হবে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূতের সাথে বৈঠকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত জানতে চেয়েছেন, তারা ওই নির্বাচনে যাবে কি না বা অংশ নিলে কোনো লাভ হবে কি না। এর উত্তরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
জানা গেছে, শিগগিরই বিএনপি নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকবে। সেখানে নেতারা সাংগঠনিক বলয়ে জাতীয় নির্বাচনের পোস্টমর্টেম করার পাশাপাশি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এ দিকে আগামী মার্চ মাস থেকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তাভাবনা চলছে বলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আগেরবার দলভিত্তিক নির্বাচন না হলেও এবার নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীক দিয়ে । সংসদের পর উপজেলা নির্বাচনকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। কিন্তু একতরফা সংসদ নির্বাচনের তিক্ত ধরনের অভিজ্ঞতার পর এই নির্বাচনে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের অন্য অংশীদাররা অংশ নেবে কি না নিশ্চিত নয়। বিএনপি নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে এখনো চিন্তা করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপিকে সঙ্কটে ফেলতে পারে এই উপজেলা নির্বাচন। সংসদ নির্বাচনে যেভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে তাতে জনগণের মতামতের কোনো প্রভাবই পড়েনি। একই অবস্থা উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে হলে তাতে অংশগ্রহণ আরো নেতিবাচক হতে পারে।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন মার্চ থেকে উপজেলা নির্বাচন শুরুর ঘোষণা দেয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। সরকারি জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন।
বর্তমানে সারা দেশে ৪৯৪ উপজেলার মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের দেড় শতাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন দুই শতাধিক। গত উপজেলা নির্বাচনে বেশির ভাগ এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
ইসি কর্মকর্তা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, মার্চে উপজেলা নির্বাচন করতে হলে, জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরই উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ছয় ধাপে ওই নির্বাচনের ভোট হয়। সে সময় ছয় ধাপে ৪৮৭টিরও বেশি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে ওই সব উপজেলার নির্বাচন ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। জুলাইয়ের পরে যেসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে সেগুলোর নির্বাচন পরে সুবিধাজনক সময়ে ঘোষণা করা হবে।