ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক মারলন স্যামুয়েলস পেশাদার ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জনি গ্রেভ জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা স্যামুয়েলস গত জুনে ক্রিকেট থেকে অবসরের বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
ক্লায়েভ লয়েডদের গড়া উজ্জ্বল ক্যারিবিয়ান সাম্রাজ্য সময়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে পাদপ্রদীপের আড়ালে পড়ে চলে। এরই মাঝে ব্রায়ান লারা, কার্ল হুপার, ক্রিস গেইলদের মতো কিংবদন্তিরা এসেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্যের অভাব ছিল দলটির। অবশেষে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে দুটি শিরোপা জয়ে দীর্ঘ সময় ধরা চলা সাফল্যের খরা কাটিয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা।
আর দুটি বিশ্বকাপ জেতা টি-টোয়েন্টি ফাইনালের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন এই ক্যারিবিয়ান। বড় মঞ্চে সবসময় পারফর্ম করা এই ক্রিকেটার নিজেকে প্রমাণ করে গেছেন বিভিন্ন সময়। ক্যারিয়ারে এই ক্রিকেটারের সবচেয়ে মনে রাখার মতো অনেক পারফরম্যান্সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলো কাড়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই অতিমানবীয় ইনিংস। যেখানে দলের চরম বিপর্যয়ের মুহূর্তেও মাথা ঠান্ডা রেখে সে সময়কার সবচেয়ে বিধ্বংসী দুই বোলার লাসিথ মালিঙ্গা এবং অজান্তা মেন্ডিসকে পাড়ার বোলার বানিয়ে খেলা ৫৬ বলে ৭৮ রানের ইনিংস। তার এই ইনিংসের উপর ভর করে ফাইনালে লঙ্কানদের হারিয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা।
এর চার বছর পর ভারতের মাটিতে নিজেদের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার ফাইনাল ম্যাচে অনন্য এক কীর্তি গড়েন স্যামুয়েলস। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ওঠে এই ক্রিকেটারের হাতে। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারানোর পথে ৬৬ বলে অপরাজিত ৮৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন এই ক্রিকেটার।
কেবল সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট নয়, স্যামুয়েলস সফল ছিলেন ওয়ানডে এবং টেস্টেও। ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই ক্রিকেটার স্পিন খেলায়ও ছিলেন দারুণ স্বচ্ছন্দ্য। আর তাইতো মাত্র ২১ বছর বয়সে নিজের প্রথম টেস্ট শতক তুলে নিয়েছেন ভারতের ইডেন গার্ডেন্সে। এমনকি টেস্টে সর্বোচ্চ ২৬০ রানও এসেছে উপমহাদেশের বুকে।
ক্রিস গেইলের সঙ্গে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৩৭২ রানের জুটি গড়া স্যামুয়েলস সব ফরম্যাট মিলিয়ে করেছিলেন ১১, ১৩৪ রান। যেখানে আছে ১৭ শতক। এছাড়াও বল হাতে ১৫২ উইকেট রয়েছে স্যামুয়েলসের।
ক্রিকেট মাঠের সফল এই চরিত্র অবশ্য মাঠের বাইরে ছিলেন চরম বিতর্কিত। কখনো সতীর্থের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়া, কিংবা শেন ওয়ার্নের সঙ্গে হাতাহাতি। আবার বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতে সংবাদ সম্মেলনে পা তুলে বিতর্কের জন্ম দেওয়া। কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে বেন স্টোকসের বউকে নিয়ে কটুক্তি। এইসব নিয়ে এগিয়ে যাওয়া স্যামুয়েলস ক্রিকেটের মতো বর্ণময় ক্যারিয়ারের বিতর্কেরও কী অবসান ঘটাবেন!