ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের ধানের শীষ প্রতীক ও বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, জনগণের আস্থা হারিয়ে দিনের ভোট রাতে করা জনবিচ্ছিন্ন দল আওয়ামী লীগ। সেই দলটির প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা প্রতিনিয়ত ধানের শীষের গণসংযোগে বাধা দিচ্ছেন।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন,যতই বাধা আসুক আগামী ১২ নভেম্বর ফলাফল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ভোট কেন্দ্রে থাকবো। বিজয়ই নিয়েই ঘরে ফিরব।
প্রতীক পাওয়ার পর গত ২৩ অক্টোবর জুমার নামাজ আদায় করে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ১নং সড়ক থেকে ধানের শীষের পক্ষে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেন বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রথমদিনেই ধানের শীষের গণজোয়ার দেখে ভয়ে ভীত হয়ে প্রতিনিয়ত বাধা দিয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর যখন কেন্দ্রীয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে পায় হেঁটে খিলক্ষেত থানার কুড়াতলি এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সাথে নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। পথে পথে দলে দলে নেতাকর্মীরা এ গণসংযোগে যোগ দিতে দেখা যায়। এরপর কুড়িল, বিশ্ব রোড,জোয়ার সাহারা,বসুন্ধরা গেইট হয়ে জগ্ননাথপুরে যখন গণসংযোগের সমাপ্তি টানেন তখন জাহাঙ্গীর ঘোষণা দেন- এই জনস্রোতই প্রমাণ করে দেশের মানুষ তথা ঢাকা-১৮ আসনের মানুষ খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও গণতন্ত্রের প্রতীক ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছেন।
বুধবার নির্বাচন কমিশনের সাথে করা বৈঠক বিষয়ে বলতে গিয়ে এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে আমাদের মিটিং ছিল। তারা বলেছে, আপনাদের নেতাকর্মীরা যখন ধানের শীষের ভোট চাইতে বের হয় তখন হাজার হাজার নেতাকর্মী গণসংযোগে বের হন। হাজার হাজার মানুষ বের হয় সিইসি বলেছেন। আরো বলেছেন, এলাকার রাস্তাঘাট ভালো না, এলাকার উন্নয়ন নেই, নেতাকর্মী কম করে নিয়েন। তখন আমি বলেছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের নির্র্বাচনে জয়ী হয়ে এই এলাকার যত উন্নয়ন তিনি করেছেন। আর কেউ উন্নয়ন করেনি। তাই আমরা বিশ্বাস করি, আাগামী ১২ নভেম্বও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিবেন। আর আমাদের নেতাকর্মীরা পোলিং এজেন্ট হিসেবে ভোট কেন্দ্রে থাকবেন, কেন্দ্রে থাকেবন। সকাল সকাল কেন্দ্রে যাব রেজাল্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবো।
তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে জনগণ ভোট দিতে পারছেন না। আমাদের নেত্রী বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন আমরা জীবন দিয়েছি, তেমনি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রয়োজনের আবারো জীবন দিব। তারপরও গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবো, ইনশাহ আলাহ।
দেশে দুর্নীতি, দুঃশাসন, চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বালিশ কেলেঙ্কারি, পর্দা কেলেঙ্কারি এ সব দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। আওয়ামী লীগের ফরিদপুরের দুই নেতা দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে তা মানুষ ভুলে যায়নি। মা-বোনদের ইজ্জত লুটে নিচ্ছে, তারা হুমকির সম্মুখিন তা মানুষ ভুলে যায়নি। আমাদের বহু ভাই গুম হয়েছেন তা কী আপনারা ভুলে গেছেন? গায়েবি মামলা,আমাদের উপর যে নির্যাতন নিপীড়ন হচ্ছে তা ভুলে গেছেন?
আমরা চাকরি করতাম, ব্যবসা করতাম এখন তা পারি না-এসব কী আমরা ভুলে গেছি? ঘরে থাকতে পারি না, সন্তানের মুখ দেখ পারি না- এসব আমরা যদি ভুলে না যাই তাহলে এর প্রতিবাদ আমরা করবো। আমরা আর কিছুকে ভয় করবো না। আমরা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ সৃষ্টি করবো। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবো।
গণসংযোগ থেকে ধানের শীষকে গণতন্ত্রের প্রতীক, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার প্রতীক এবং ধর্ষণ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধের প্রতীক উল্লেখ করে নানা শ্লোগান দিয়ে নেতাকর্মীরা ভোট চাইতে করতে থাকেন। এ সময় ‘খালেদার জিয়ার ছালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’,‘তারেক রহমানের ছালাম নিন,ধানের শীষে ভোট দিন’,‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের ছালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’,‘সিল মারো ভাই সিল মারো,ধানের শীষে সিল মারো’, ‘এলাকাবাসীকে বলে যাই, ধানের শীষে ভোট চাই,’ ‘মা-বোনদের বলে যাই, ধানের শীষে ভোট চাই,’ভোট দিবেন কিসে ধানের শীষে, ‘গণতন্ত্রের মার্কা, ধানের শীষ মার্কা’, ইত্যাদি নানা শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে নেতাকর্মী সমর্থকরা।
এ সময় জাহাঙ্গীরের গণসংযোগ এক বিশাল সমাবেশ রূপ নেয়। যে সড়ক দিয়েই সমাবেশ যাচ্ছিল হাজারো মানুষ সড়কের দু’ধারে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয় সমর্থন জানাচ্ছিল। বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকেও নারাী-পুরুষ হাত নেড়ে ধানের শীষের এ গণসংযোগকে সমর্থন জানায়। কেউ কেউ মিছিলের সাথে সাথে শ্লোগানও দেন। বিনয়ের সাথে হাত নেড়ে এসব মানুষদের সমর্থনের জাবাবও দেন জাহাঙ্গীর।
গণসংযোগকালে জাহাঙ্গীর ধানের শীষের মার্কা দেখিয়ে নানা বয়সী নারী-পুরুষে ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় জাহাঙ্গীরকে মুরব্বীরা মাথা হাতবুলিয়ে দোয়া করে দেন। তরুণ যুবকরা তাকে বুকে টেনে নেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিএনপি মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, মহানগর বিএনপি নেতা কাজী হযরত আলী, ছাত্রদলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফকরুউদ্দিন রবিন, সাধারণ সম্পাদক গাজী রেজাউল হক রিয়াজসহ বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী গণসংযোগে অংশ নেন।