মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা অনুসরণ করা হয়। ফাঁসির আসামিকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয়েছে রাতের অন্ধকারে বা সূর্যোদয়ের আগে।
প্রতিটা মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি, কেন ভোরের আগেই ফাঁসি দেওয়া হয়?
ফাঁসি ! খুবই বেদনাদায়ক এক অনুভুতি । লিখে কিংবা বলে আপন জনের এই বিদায়ের বিষোদগার ব্যক্ত করা পৃথিবীর কাহারো পক্ষেই হয়তো সম্ভব নয় । মৃত্যুর আগে কত বার যে মরতে হয় তা কেবল দন্ড প্রাপ্ত ফাঁসির আসামির বলতে পারে ।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামী কে গভীর রাতে ফাঁসি দেওয়ার পিছনে বেশ কয়েকটি কারন রয়েছে ।
১. আইনি কারণ
‘মডেল প্রিজন ম্যানুয়াল’-এ স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, দিনের সূর্য ওঠার আগেই মৃত্যুদণ্ডকে কার্যকর করতে হবে। মৃত্যুদণ্ড সাধারণত জেলখানাতেই কার্যকর করা হয়। এক্ষেত্রে জেলখানার অন্য কয়েদিরা যেন কোনো ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য রাত সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ রাতে জেলখানার সব কয়েদিদের তাদের কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়।
২. প্রশাসনিক কারণ
মৃত্যুদণ্ডকে কার্যকর করতে গিয়ে জেলের অন্যান্য প্রশাসনিক কাজকর্ম যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সেদিকে নজর রাখা হয়। এবং সেই কারণে জেলের দৈনন্দিন কাজকর্ম শুরু হওয়ার আগেই ফাঁসির বিষয়টি সেরে ফেলা হয়। ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পরে জেল কর্তৃপক্ষকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন, মৃতদেহের ডাক্তারি পরীক্ষা, বিভিন্ন নথিপত্র তৈরি, মৃতের পরিবারবর্গের হাতে মৃতদেহ হস্তান্তর ইত্যাদি। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জেলের অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়, তা সুনিশ্চিত করার জন্যই সকাল সকাল সেরে ফেলা হয় ফাঁসি দেওয়ার কাজটি।
৩. নৈতিক কারণ
ফাঁসি দেওয়ার সময় চেষ্টা করা হয়, আসামিকে যেন অতিরিক্ত মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে না হয়। দিনের মাঝামাঝি কোনো সময়ে ফাঁসিকে কার্যকর করা হলে, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে প্রবল মানসিক চাপ ভোগ করতে হয় আসামিকে। সেই কারণেই রাতে ঘুমনো আগে সুর্যের ওঠার আগেই ফাঁসিতে ঝোলানো হয় আসামিতে।
৪. সামাজিক কারণ
অনেক ক্ষেত্রেই ফাঁসির সাজার বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজে জনমত তৈরি হয়। বিভিন্ন গণআন্দোলন ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই গভীর রাতকেই বেছে নেওয়া হয় জেলের তরফ থেকে যখন সাধারণত সকলেই ঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন। সেই কারণে সমাজের মানুষ জেগে ওঠার আগেই সেরে ফেলা হয় ফাঁসির কাজটি।