বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও থেমে নেই তার বিরুদ্ধে দাখিল করা দুর্নীতি মামলার তদন্ত কাজ। তদন্ত শেষে শিগগিরই এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে। ৪২ কোটি টাকার বৈধ উৎস দেখাতে না পারার অভিযোগে এ মামলা করেছিল দুদক। একই সঙ্গে অর্থ পাচারের বিষয়ে মামলা করার সুপারিশ করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকেও চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুদকের মামলায় গত ২৬ আগস্ট হাই কোর্ট থেকে জামিন পান খালিদী। পরে ২১ এপ্রিল আপিল বিভাগও তার জামিন বহাল রাখে। পরে সেদিন দুদকের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, মামলায় জামিন বহাল থাকলেও তদন্তের বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। তাই তদন্ত চলতে বাধা নেই।
গত ৩০ জুলাই দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এইচএসবিসি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন হিসাবে ৪২ কোটি টাকা জমা রেখেছেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী, যার বৈধ কোনো উৎস নেই। ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ওই টাকা অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্তে প্রমাণিত। তৌফিক ইমরোজ খালিদী ওই অস্থাবর সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে।
খালিদীর মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে দাখিল করা মামলার তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। এছাড়া তার অর্থপাচারের বিষয়ে মামলা করতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখন তারাই দেখবে।’
এর আগে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ১৩ টি এবং তার প্রতিষ্ঠান বিডিনিউজের ৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। খালিদীর বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আদালতের আদেশ অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে করা ১৩টি এফডিআর অ্যাকাউন্টে ২৪ কোটি টাকা রয়েছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে চারটি এফডিআরে অর্থের পরিমাণ যথাক্রমে- ২ কোটি, ২ কোটি, ১ কোটি ও ১ কোটি টাকা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ৯টি এফডিআরে মোট ১৮ কোটি টাকা রয়েছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে পাঁচটি এফডিআরে অর্থের পরিমাণ যথাক্রমে- ৫ কোটি, ৩ কোটি, ২ কোটি, ১ কোটি ও ১ কোটি। সাউথইস্ট ব্যাংকের চারটি এফডিআরে অর্থের পরিমাণ যথাক্রমে- ২ কোটি, ২ কোটি, ১ কোটি ও ১ কোটি টাকা।
এইচএসবিসি ব্যাংকের একটি এফডিআরে অর্থের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডে সাতটি এফডিআরে অর্থের পরিমাণ যথাক্রমে- ৫ কোটি, ৩ কোটি, ১ কোটি, ১ কোটি, ১ কোটি, ৫০ লাখ ও ৫০ লাখ। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১টি এফডিআরে রয়েছে ১ কোটি টাকা।
তৌফিজ ইমরোজ খালেদীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান গত ১ ডিসেম্বর আদালতে অ্যাকাউন্টগুলো ফ্রিজের আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, তৌফিক ইমরোজ খালেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও নিজ নামীয় হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা স্থানান্তর করেছেন। তিনি বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।
এছাড়া এলআর গ্লোবাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি থেকে অবৈধ প্রক্রিয়ায় তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অ্যাকাউন্টে ৫০ কোটি টাকা স্থানান্তর হয়েছে। এতে মানি লন্ডারিং অপরাধ হয়েছে। তৌফিক ইমরোজ খালেদী ইংল্যান্ডের সিটিজেন। তিনি তার ব্যাংকে রক্ষিত ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অ্যাকাউন্টে রক্ষিত অর্থ উত্তোলনপূর্বক দেশের বাইরে পাচার করবে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ১৮ (সংশোধিত) ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ধারা ১৪ এর বিধান মতে তার অপরাধলব্ধ অর্থের ব্যাংক হিসাব/এফডিআর ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করা প্রয়োজন। ওই অর্থ স্থানান্তর হয়ে গেলে আইনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে আদালত তার আদেশে বলেন, বর্ণিত অস্থাবর সম্পত্তি/এফডিআর হিসাবগুলো মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারা ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) অধীনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বর্ণিত অস্থাবর সম্পত্তি/এফডিআর হিসাবগুলো এ মুহূর্তে অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না।
প্রসঙ্গত, তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং বিডিনিউজের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত বছরের ২৬ নভেম্বর খালিদীকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একই ঘটনায় এল আর গ্লোবাল (এলআরজি) অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিয়াজ ইসলামকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।