বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন (৮৫) বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। শনিবার রাত সাড়ে আটটায় রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গতকাল ময়মনসিংহ, মুক্তাগাছা ও গ্রামেরবাড়িতে তিন দফা জানাযা শেষে বাবার পাশে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। তিনি বেশ কিছু দিন ধরে বার্ধকজনিত কারণে নানা রোগের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এরমধ্যে করোনা পজেটিভ হন তিনি।
রোববার সকালে মরদেহ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আনার পথে শহর বাইপাস সড়কে পুলিশী বাঁধার মুখে পড়ে। করোনার অজুহাতে কোতোয়ালী থানর ওসি ফিরোজ তালুকদারের নেতৃত্বে পুলিশ ময়মনসিংহের পরিবর্তে মুক্তাগাছায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পাঠানোর চেষ্টা করেন। এসময় পুলিশের সাথে ময়মনসিংহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বাগি¦তÐায় জড়িয়ে পড়লে শতশত নেতাকর্মী রাস্তায় অবস্থান গ্রহণ করে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পুলিশ সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর লাশ ময়মনসিংহ নগরীর গঙ্গা দাস গুহ রোডের বাসায় দশ মিনিট রাখার শর্ত দিলে বিএনপি নেতাকর্মীরা শর্ত মেনে লাশ নিয়ে আসে। সেখানে শতশত মানুষ সাবেক এই নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন। পুলিশ সেখান থেকে লাশ দ্রæততম সময়ের মধ্যে মুক্তাগাছায় নিয়ে যেতে নেতাকর্মীদের ওপর চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু যোহরের নাম ঘনিয়ে আসায় বাসার সামনেই হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে বাদ যোহর প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন মাওলানা শফিকুল ইসলাম। এখানে প্রিয় এই মানুষটিকে এক নজর দেখার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নামে। জানাযার সময় বাসার সামনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় গঙ্গা দাস গুহ রোডে হাজারো মানুষ জানাযায় শরীক হন। জানাযায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগাঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার, শাহ নুরুল কবীর শাহিন, আবুল বাশার আকন্দ, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহŸায়ক অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহŸায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ওয়ারেস আলি মামুন, মরহুমের ছোট ভাই ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মাহমুদ আলম, মরহুমের ছেলে রানাসহ বিপুল বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। রোববার বাদ যোহর ময়মনসিংহ ঈদগাহ ময়দানে প্রথম জানাযা হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশী বাঁধার কারণে জানাযা বাসভবনের সামনেই অনুষ্ঠিত হয়। পরে জন্মস্থান মুক্তাগাছায় নেয়া হলে উপজেলা গরুহাটায় মুক্তাগাছা পুলিশ আবারো বাঁধা দেয় এবং লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। প্রায় আধঘণ্টা বাগি¦তÐার পর হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে নেতাকর্মীরা লাশ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন খেলার মাঠে নিয়ে যান। সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাযা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাদ মাগরেব তৃতীয় জানাযা শেষে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে বাবার পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
এ কে এম মোশাররফ হোসেন চাকুরি জীবনে বিসিআইসির চেয়ারম্যান ও শিল্প সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ পর্যন্ত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও তিনি দৈনিক দিনকালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। তাঁর দুই ছেলের একজন আমেরিকা প্রবাসী।
এ কে এম মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা এ কে এম মোশাররফ হোসেনের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানান। একেএম মোশাররফ হোসেন ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনরে সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এদিকে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ কে এম মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুতে দক্ষিণ জেলা বিএনপি তিন দিনব্যাপী শোক পালনের কর্মসুচী ঘোষণা করেছেন। জেলার সকল পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের কালো ব্রাজ ধারণ, দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং আগামী শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে কোরআনখানি ও বাদ আসর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।