খায়রুল আলম রফিক : পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি জনমুখী করতে, মানুষের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানা পুলিশের উদ্যোগে বিট পুলিশিং কার্যক্রম উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে । শনিবার ১৭ অক্টোবর নজরুল একাডেমি মাঠে সভা হয় । সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান । সভাপতিত্ব করেন, ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মাহমুদুল হাসান পিপিএম ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১৫ বছরের নিচে বিয়ে স¤পূর্ণরুপে বন্ধ করা হবে। এই লক্ষে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রিশালে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে সাজা ও জরিমানা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। অভিভাবক, কাজী এমন কি যারা বাল্য বিবাহে সহযোগিতাকারীদের বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে না। ইউএনও বলেন, বাল্য বিবাহ সমাজ ও পরিবারের জন্য দুঃখ বয়ে আনে। এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে। ইউএনও বলেন, আমি ত্রিশালে যোগদানের পর থেকেই বাল্য বিবাহ বন্ধে , নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি । পাশাপাশি মাদক বন্ধেও কাজ করছি । মাদক সমাজ,পরিবার ও ব্যক্তিকে ধ্বংস করে। তাই মাদককে না বলতে হবে।
সভায় অন্যান্যেও মধ্যে বক্তব্য রাখেন , অনুষ্ঠানে এস.আই বিকাশ চন্দ্র সরকারের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আ.লীগের প্রবীণ নেতা ফজলে রাব্বী, জেলা আ.লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নবী নেওয়াজ সরকার, উপজেলা পরিষদের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান শোভা মিয়া আকন্দ, ভাইস চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা খানম রুমা, ত্রিশাল থানার পুলিশ পুরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র রায়, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মন্ডল, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুন্নেছা বিউটি, উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, সরকারি নজরুল একাডেমির প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম, আ.লীগ নেতা ইকবাল হোসেন, উপজেলা বিট পুলিশিং এর সভাপতি আঃ মোতালেব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মান্নান, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, সুয়েল মাহমুদ সুমন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহীম খলিল নয়ন, ত্রিশাল রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি কামাল হোসেন, ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা সরকার, সাবেক সভাপতি খোরশিদুল আলম মুজিব প্রমুখ।
আওয়ামীলীগ নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, বাল্য বিবাহ, মাদক, যৌতুক ইভটিজিং, জঙ্গি, সন্ত্রাসের মতো সমাজিক অপরাধ প্রতিরোধে আমরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছি । এর মধ্যদিয়েই আমরা সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি।
নবী নেওয়াজ সরকার বলেন, সুশিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ক্রীড়া দিয়েই তাদের বাল্য বিবাহ,ইভটিজিং ও মাদকের বাইরে রাখতে হবে। আমি মনে করি দারিদ্রতা, অসচেতনতা, শিক্ষার অভাবে দেশের বাল্য বিবাহ সংঘটিত হয়। সরকার বাল্য বিবাহ বন্ধে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের পাশাপাশি নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। প্রবীন আ,লীগ নেতা ফজলে রাব্বী বলেন, বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি হয়েছে। যেখানে বাল্য বিবাহ হবে অথবা নারী নির্যাতন হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে । মেয়েরা এখন নিজেরা নিজেদের বিয়ে বন্ধ করছে এবং এই জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পাচ্ছে।
সাংবাদিক কামাল হোসেন বলেন, প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বাল্য বিবাহ বন্ধে বিভিন্ন রকমের সচেতনতামূলক সংবাদ ও বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। আমরা গণমাধ্যমের কর্মীরা বাল্য বিবাহ বন্ধে সচেষ্ট আছি ।
উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সুয়েল মাহমুদ সুমন বলেন, আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। একটা সময় ছিল যখন মানুষ বিয়ের বয়স নিয়ে ভাবত না। এখন সবার মধ্যে সচেতনতা এসেছে। স্থানীয় প্রশাসন, গ্রামের মানুষ এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে।
সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মন্ডল বলেন, বাল্য বিবাহ বন্ধে মানুষের মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা ও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা খানম রুমা বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে প্রত্যেক মেয়ের জন্য জীবন দক্ষতামূলক শিক্ষা জরুরি। এ শিক্ষার মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা নিজেরা সচেতন হবে। তারা নিজেরা নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারবে। তাদের বিয়ে দিতে চাইলে তারা নিজেরাই প্রতিবাদ করতে পারবে। তারা বলতে পারবে, বিয়ে ছাড়া আমরা অনেক কিছু করতে চাই। দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, আত্মীয়স্বজনসহ আশপাশের মানুষের চাপ ও বিভিন্ন কারণে বাল্যবিবাহ হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান মাহমুদ বলেন, ত্রিশালে ধর্ষণ মামলাগুলি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে । ধর্ষকদের সাজা হলেই ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ হবে ।