আজ ১৫ অক্টোবর বাংলার প্রথম নারী চিকিৎসক জোহরা বেগম কাজীর জন্মদিন।
আজ গুগলে প্রবেশ করলেই দেখা মিলছে বিশেষ এ ডুডলটি। যেখানে গুগলের অক্ষরগুলোকে, জোহরা বেগম কাজীর গলায় স্টেথসস্কোপ এবং মাথার উপর গাছের ছায়া। গায়ে জড়ানো হলুদ রংয়ের একটি পোশাক।
গুগল বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ ও ঐতিহাসিক দিনকে স্মরণ করার জন্য,অনেক দিন থেকেই গুগল সার্চে ডুডল প্রকাশ করে আসছে। এ আগেও দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, প্রখ্যাত স্থপতি এফ আর খান, জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মদিনসহ ,উল্লেখযোগ্য দিনে ডুডল প্রকাশ করেছিল গুগল।
অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী উপমহাদেশের প্রথম মুসলমান বাঙালি মহিলা চিকিৎসক । তিনি জীবদ্দশায় মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন নিঃস্বার্থভাবে। তিনিই প্রথম ধাত্রীবিদ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করে অজ্ঞ ও অবহেলিত নারী সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। নারী সমাজের উন্নত চিকিৎসার সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এছাড়া নারী সমাজকে সামাজিক কুসংস্কারে শক্ত বাধাকে অতিক্রম করে মুক্তিদাত্রী হিসেবে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনিই এদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রথম আলোকবর্তিকা হাতে এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তিনি পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের গুণে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আসতে পেরেছিলেন। তিনি সারাটা জীবন আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। এ পেশায় এসে মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন। বাংলাদেশে চিকিৎসা অঙ্গনে অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী একটি নতুন ভুবন রচনা করে গেছেন। এ দেশের স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা এবং অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী একসূত্রে গাঁথা। তিনি নিঃস্বার্থভাবে মানবকল্যাণে নিজেকে উজাড় করে সর্বজনীন হয়েছেন। তিনি এ দেশের প্রথম মুসলিম মহিলা ডাক্তার ও আদর্শবান শিক্ষয়িত্রী হিসেবে যে অবদান রেখেছেন তা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং আগামী দিনের জন্য খুবই মঙ্গলজনক।
১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজনান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ডা. কাজী আব্দুস সাত্তার ও মায়ের নাম মোসাম্মদ আঞ্জুমান নেসা। আদি পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায়। জোহরা কাজী ১৯২৯ সালে আলিগড় মুসলিম মহিলা স্কুল থেকে প্রথম বাঙালি মুসলিম হিসেবে এসএসসি পাশ করে। ২৩ বছর বয়সেই দিল্লির লেডি হাডিং মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৩৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন। পরের বছর কর্মজীবনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন।
১৯৪৭ পরবর্তী এদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেন। তিনি একাধারে চিকিৎসাশাস্ত্রে বাঙালি নারীচিকিৎসকদের অগ্রপথিক, মানবতাবাদী ও সমাজ-সংস্কারক ছিলেন। এছাড়া গর্ভবতী মায়েরা হাসপাতালে এসে যেন চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন, সেজন্য তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারীদের জন্য পৃথক চিকিৎসা ব্যবস্থা করেন। এমনকি পিছিয়ে পড়া চিকিৎসাশাস্ত্রে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন। তিনি গাইনোকলজি বিভাগের প্রধান ও অনারারি প্রফেসর ছিলেন ,মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। এছাড়া চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বেশ কিছু বছর কিছু হাসপাতালে কনসালট্যান্ট হিসেবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
শুধু চিকিৎসা নয়,খাঁটি দেশপ্রেমিক ছিলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও ভূমিকা রাখেন, এমনকি ইতিহাস-সচেতন মানুষ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘তখমা-ই পাকিস্তান’ খেতাবে ভূষিত করেন।
দীর্ঘ কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে পান রোকেয়া পদক ও বিএমএ স্বর্ণপদক এবং একুশে পদক’ (মরণোত্তর) ।
সংসার জীবনে তিনি তৎকালীন আইনজীবী ও সংসদ সদস্য রাজু উদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ
২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে এ মহীয়সী নারী, ঢাকার নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এ মহীয়সী নারীকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই ,আমাদের মধ্যে চিরদিন বেঁচে থাকবেন।
মোঃ সোহেল রানা