একইদিনে দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের পদত্যাগের ঘটনায় আইনাঙ্গনে তোলপাড় চলছে। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে এ এম আমিন উদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তাদের পদত্যাগের কারণ নিয়ে উচ্চ আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে চলছে কানাঘুষা। যদিও তারা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের কথা বলছেন।
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্র ও একাধিক সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে এ এম আমিন উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়ার ‘ক্ষোভ’ থেকেই তারা পদত্যাগ করেছেন।
জানা গেছে, অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা ২০০৯ সালের ২৭ মার্চ থেকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মৃত্যুর পর মুরাদ রেজা প্রায় নিশ্চিত ছিলেন তিনিই হবেন ১৪তম অ্যাটর্নি জেনারেল। তাকে অ্যাটর্নি জেনারেল করতে প্রভাবশালী এক আইনজীবী নেতা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে মতও দিয়েছিলেন।
এদিকে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ২০১০ সাল থেকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি আইন পেশায় ও বয়সের দিক দিয়ে নতুন নিয়োগ পাওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের সিনিয়র।
আরও জানা যায়, গত ৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরেই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মোমতাজ উদ্দিন ফকির তাদের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা ঘনিষ্ঠজনদের কাছে জানান। তখন থেকেই পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠে। গতকাল পদত্যাগের পূর্বপ্রস্ততি হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে বইপত্রসহ তাদের মালামাল সরিয়ে নেন। গতকালই তারা পদত্যাগপত্র তৈরি করে রাখেন।
রোববার (১১ অক্টোবর) সকালে সলিসিটর কার্যালয়ে ও আইন মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু হলে তারা নিজেদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান।
মোমতাজ উদ্দিন ফকির ২০০১-২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগেও ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে তিনি সমিতির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আইন পেশা পরিচালনার পাশাপাশি তিনি বারের রাজনীতিতে সরব হবেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে মুরাদ রেজা নিয়মিত আইনজীবী পেশা পরিচালনা করবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘একান্ত ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।’
অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজাও ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে তিনি জানান।
জানতে চাইলে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে সবসময় আসা-যাওয়া থাকেই। ওনারা হয়ত অনেক দিন কাজ করেছেন, ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে আর থাকছেন না। আমার সঙ্গে ওনাদের কথা হয়নি। এখন সরকার যদি তাদের পদত্যাপত্র গ্রহণ করেন তাহলে সরকার অবশ্যই আরও দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেবেন।’
উল্লেখ্য, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে তিনজন দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাদের দুইজনের পদত্যাগের ফলে এখন শুধু অ্যাডভোকেট এস এম মুনীর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে রয়েছেন।