কাতার বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইপর্ব শুরু হলো আর্জেন্টিনার জয় দিয়ে। বৃহস্পতিবার বুয়েন্স আয়ার্সের লা বোম্বোনেরায় ইকুয়েডরকে ১-০ তে হারিয়েছে তারা লিওনেল মেসির একমাত্র গোলে।
দুই বছর আগের রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট পেতে কতই না ভুগতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর বাছাইয়ের শেষ ম্যাচে এই ইকুয়েডরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা মেসিই দলকে আবার উদ্ধার করলেন কাতারের যাওয়ার মিশনে।
আর্জেন্টিনার কাতার বিশ্বকাপের এই অভিযাত্রা শুরুর কথা ছিল মার্চে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা স্থগিত হয়। শেষ পর্যন্ত মেসি ও আর্জেন্টিনা মাঠে নামলো এবং আইকনিক লা বোম্বোনেরায় জয় উদযাপন করলো। ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর আন্তর্জাতিক গোল বেড়ে হলো ৭১। আর আর্জেন্টিনা অপরাজিত থাকলো আট ম্যাচ, যার শুরু ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে চিলির বিপক্ষে জয় দিয়ে। তাদের সবশেষ হার ছিল কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে।
গত নভেম্বরে উরুগুয়ের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে ২-২ গোলে ড্রর প্রায় এক বছর পর প্রথমবার মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ম্যাচটা যে খুব সহজে জিতেছে তারা, তা নয়। মেসির পেনাল্টি গড়ে দিয়েছে দুই দলের পার্থক্য। লাউতারো মার্তিনেজ, মেসি ও লুকাস ওকাম্পোসের আক্রমণভাগ তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের একমাত্র পেনাল্টি শটের পর ম্যাচে আর একবার লক্ষ্যে শট রাখতে পেরেছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু ব্যবধান ছিল ওই এক গোলেরই। স্বস্তির কথা ম্যাচ শেষে তিন পয়েন্ট পেয়েছে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের মাত্র ১১ মিনিটে সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায় আর্জেন্টিনার। পারভিস এস্তুপিনানের কড়া ট্যাকলে ইকুয়েডরের বক্সের মধ্যে পড়ে যান ওকাম্পোস। পেনাল্টি পায় স্বাগতিকরা। দুই মিনিট পর নেওয়া পেনাল্টি শট থেকে মেসি করেন গোল। গোলপোস্টের ডানে শট নেন অধিনায়ক, তার শটের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ইকুয়েডর গোলকিপার আলেক্সান্দার ডোমিঙ্গেজ। কিন্তু বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে আসা বল ঠেকাতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল আর্জেন্টিনার। মেসির বাড়ানো বলে হেড করেছিলেন ওকাম্পোস। কিন্তু অতিথি গোলকিপার ডোমিঙ্গেজ আঙুলের ছোঁয়ায় বল মাঠের বাইরে পাঠালে কর্নার হয়। ম্যাচে এই দুটি শটই ছিল লক্ষ্যে।
যোগ করা শেষ চার মিনিটের অন্তিম মুহূর্তে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া রোদ্রিগো দে পলের ডাইভ অল্পের জন্য গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। তাতে এক গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
আগামী মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) বিশ্বের সর্বোচ্চ স্টেডিয়াম লা পাজের এস্তেদিও এর্নান্দো সিলসে বলিভিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। ওই দিনে ইকুয়েডর স্বাগত জানাবে উরুগুয়েকে।
একই দিনে বাছাইয়ের অন্য ম্যাচে যোগ করা সময়ের গোলে উরুগুয়ে ২-১ গোলে হারিয়েছে চিলিকে। ৩৯ মিনিটে লুইস সুয়ারেজের পেনাল্টিতে এগিয়ে যায় উরুগুয়ে। দ্বিতীয়ার্ধে অ্যালেক্সিস সানচেজ চিলিকে সমতায় ফেরান। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ম্যাক্সি গোমেজের গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
পেরু ও প্যারাগুয়ে করেছে ২-২ গোলের রোমাঞ্চকর ড্র। আন্দ্রে কারিয়োর গোলে এগিয়ে যায় প্যারাগুয়ে। আনহেল রোমেরো স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান। ৮১ মিনিটে তার জোড়া গোলে স্কোর ২-১ করে পেরু। কিন্তু চার মিনিট পর কারিয়ো দ্বিতীয় গোল করে প্যারাগুয়েকে এক পয়েন্ট এনে দেন।
দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে উরুগুয়ে। তাদের সমান ৩ পয়েন্ট পেলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থানে আর্জেন্টিনা।
দশ দলের এই বাছাইপর্বের শীর্ষ চার দল সরাসরি কাতার বিশ্বকাপের টিকিট পাবে এবং পঞ্চম স্থানে থাকা দলকে খেলতে হবে আন্তঃআঞ্চলিক প্লে অফ।