দেখতে দেখতে নতুন আরেকটি বছরে পদার্পন করেছি আমরা। আমাদের অনেকের কাছেই নতুন বছরে নিজের সেরা অংশটি কাজে লাগিয়ে লক্ষ্যে পৌছে যাবার এক ধরণের তাড়না থাকে। আর সে কারণেই মানুষ ‘নিউ ইয়ার রেজ্যুলিউশন’ বা নতুন কিছু করার সংকল্প করে।
অর্থাৎ পুরনো খারাপ বা ক্ষতিকর অভ্যাস কাটিয়ে ওঠা, কিংবা বাড়তি খরচ কমিয়ে আনা বা অধ্যবসায়ী হওয়া কিংবা অন্যের মতের চেয়ে নিজের মতকে গুরুত্ব দিতে শেখা এমন ধরণের নানা ধরণের সংকল্প চলতে থাকে।
চাইলে কেউ কেউ নতুন কোনো ‘হবি’ বা শখ যেমন বাগান করা কিংবা ইয়োগা শুরু করতে পারেন।
আপনার ‘নিউ ইয়ার রেজ্যুলিউশন’ যাই হোক, আপনার মনে যদি প্রেরণা বা প্রনোদনা বা মোটিভেশন না থাকে, আপনি নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবেন।
কিন্তু সংকল্পে স্থির থাকা এত সহজ ব্যাপার নয়। স্ক্রানটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে মাত্র আট শতাংশ মানুষ নিজের ‘নিউ ইয়ার রেজ্যুলিউশন’ পূর্ণ করতে পেরেছেন।
কিন্তু সংকল্পে স্থির থাকার জন্য কিছু পরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে—
১. সহজ লক্ষ্য স্থির করুন
বাস্তবসম্মত লক্ষ্য স্থির করা হলে সফলতার সুযোগ বা সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই মানুষ এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যা স্বল্প সময়ে অর্জন করা সম্ভব হয় না। ফলে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন অনেকেই।
মনোবিজ্ঞানী র্যাচেল ওয়েইনস্টেইন বলছেন,‘অনেকে মনে করেন, নতুন বছরে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষে পরিনত হবেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যে পুরোপুরি বদলে যাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব না।’
সেক্ষেত্রে ছোট ছোট লক্ষ্য রাখলে, সেটা আপনি অর্জন করতে পারবেন। যেমন আপনার যদি ম্যারাথনে দৌড়ানোর ইচ্ছা থাকে, তাহলে কাল থেকে একজোড়া দৌড়ানোর জুতো কিনে হাটতে শুরু করুন।
রান্নায় পারদর্শী হতে চান? তাহলে আজই রান্নাঘরে বয়োজ্যেষ্ঠদের খাবার তৈরিতে সাহায্য করতে শুরু করুন।
মনোবিজ্ঞানী ওয়েইনস্টেইন বলছেন, পরিবর্তন ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমেই শুরু হয়।
২. লক্ষ্য নির্দিষ্ট করুন
লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য ঠিকঠাক পরিকল্পনা করতে হবে, আর সে অনুযায়ী ক্রমে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা যখন কোনো গোল বা লক্ষ্য স্থির করি, তখন সে লক্ষ্যে পৌছনোর জন্য পরিকল্পনা যথাযথ করতে পারি না।
কিন্তু লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা খুবই জরুরী ব্যাপার। ছোট ছোট বিষয়ে নজর দিন, তাহলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।
৩. সাপোর্ট তৈরি করুন
আপনার মত আরো যারা একই ধরণের পরিকল্পনা করেছেন, তাদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা শুনতে পারেন। নিতে পারেন প্রয়োজনীয় পরামর্শও। আবার যারা একই লক্ষ্য স্থির করেছে, জানাশোনার মধ্যে হলে তাদের নিয়ে একসাথে কাজ করতে পারেন।
যেমন আপনি হয়ত ওজন কমানোর পরিকল্পনা করেছেন, সেক্ষেত্রে আরো যারা আপনার মত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তাদের নিয়ে রোজ সকালে একসাথে হাটা শুরু করতে পারেন।
এই ব্যবস্থার ফলে যেদিন আপনার হয়ত এক ঘণ্টা বেশি ঘুমাতে ইচ্ছা করবে, সেদিন অন্য কেউ এসে হয়ত আপনাকে জাগিয়ে দেবে, হাটতে নিয়ে যাবে।
৪. ব্যর্থতা মেনে নিতে শিখুন
কোনো পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন না হয়, অর্থাৎ কোনো কিছু অর্জন করতে গিয়ে যদি পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে, তাহলে সেটি মেনে নিতে শিখুন। নানা কারণেই মানুষ ব্যর্থ হতে পারে, বা মাঝপথে গিয়ে সব ছেড়েছুড়ে দিতে পারে।
ভেবে দেখুন ঠিক কী কারণে আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। সেক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে পুনরায় শুরু করুন, ছোট লক্ষ্য সহজে অর্জন করা যায় এমন লক্ষ্য স্থির করুন। আর আপনি যদি আগের পরিকল্পনাতেই থাকেন, তাহলে এবার না-হয় ভিন্ন পন্থা অবলস্বন করুন সেটি অর্জনের জন্য। একটু একটু করে অগ্রসর হোন।
৫. নতুন বছরের পরিকল্পনার সাথে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য মিলিয়ে নিন
নতুন বছরের লক্ষ্যের মধ্যে সেটাই সেরা, যার সাথে আপনার জীবনের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের বা স্বপ্নের সাথে মিল আছে। তা না হলে, সেটি দীর্ঘক্ষণ চালিয়ে যাওয়া মুশকিল হবে।
মনে রাখতে হবে লক্ষ্য অর্জনে কেবল ইচ্ছাশক্তি যথেষ্ঠ নয়। এরসাথে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মিশেল থাকতে হবে।