শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সাদিয়া পারভীন (১০) নামের এক শিশু গৃহকর্মীকে গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেওয়া ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গৃহকর্ত্রী রুমানা জামান ওরফে ঝুমুরকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে।
নির্যাতনের শিকার সাদিয়া পারভীন শ্রীবরদী পৌর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার ট্রলিচালক সাইফুল ইসলামের মেয়ে। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রুমানা জামান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিবের স্ত্রী। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে শ্রীবরদী থানার পুলিশ পৌর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসা থেকে তাঁকে (রুমানা) গ্রেপ্তার করে। এর আগে শুক্রবার রাতে নির্যাতনের শিকার সাদিয়ার বাবা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রুমানা জামানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
পুলিশ, মামলার এজাহার ও নির্যাতনের শিকার শিশুর বাবার বক্তব্য সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে আওয়ামী লীগ নেতা আহসান হাবিব ও তাঁর স্ত্রী রুমানা জামান শিশু সাদিয়াকে গৃহকর্মী হিসেবে তাঁদের বাসায় নিয়ে যান। পরে গৃহকর্ত্রী রুমানা জামান প্রায় সময় শিশু সাদিয়ার কাজকর্মে ভুলভ্রান্তির জন্য তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রুমানা জামান গৃহকর্মী সাদিয়াকে গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন ও মারধর করেন। এতে তার মাথা, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে দগদগে ঘা ও ক্ষত হয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাতে আহসান হাবিব শিশু সাদিয়াকে তার বাবা সাইফুলের কাছে দিয়ে আসেন। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় সাদিয়াকে শুক্রবার রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং শ্রীবরদী থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
এদিকে গুরুতর আহত সাদিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতাল এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জেলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) মো. রবিউল করিম শনিবার বলেন, নির্যাতনের ফলে শিশু সাদিয়ার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে তার পেট ফুলে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তার পেটে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকতে পারে। শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন। তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে সাইফুল ইসলাম এ ঘটনার জন্য দায়ী গৃহকর্ত্রী রুমানা জামানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
শ্রীবরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বন্দে আলী মিয়া বলেন, এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুর বাবা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রুমানা জামানকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার রুমানাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।
কারাগারে বন্দী থাকায় এ বিষয়ে রুমানা জামানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে রুমানার স্বামী আহসান হাবিবের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।