করোনা দুর্যোগের কারণে বিলম্বিত হলেও অবশেষে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ‘সুতিয়াখালি ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক সৌরবিদ্যুত উৎপাদন শুরু হবে। অচিরেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আরো ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধিনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যে ময়মনসিংহ জেলার সুতিয়াখালির চরাঞ্চলে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগে এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লিমিটেড এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ও সরকারি তদারকিতে পিডিবির একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর তত্ত¡বধানে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চরাঞ্চল সুতিয়াখালিতে ১৭৪ একর জমি ওপর ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরিবেশ বান্ধব এ সৌরবিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্পের কাজ এখন প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে ব্যবহৃত বিদ্যুতের শতকরা দশ ভাগ সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৪ সালে কাগজে-কলমে প্রকল্পের যাত্রা শুরু হলেও অনেক চড়াই-উৎরাই শেষে ২০১৬ সালের শেষ দিকে বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাথে ‘বাস্তবায়নচুক্তি’ এবং বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সাথে ‘বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি’ স্বাক্ষরের পর ২০১৭ সালে ‘সুতিয়াখালি ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত প্রকল্প’ নামে বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ বাড়ানোর পর গত ৩০ জুনের মধ্যেই উৎপাদন শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের কাজে জড়িত চীনা প্রকৌশলীরা নববর্ষের ছুটিতে দেশে যাওয়ায় পর করোনা দুর্যোগের কারণে সময়মতো ফিরে না আসায় সোলার প্লেট বসানো ও সংযোগ প্রদানের কাজ বিলম্বি হয়। এছাড়া স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি আর কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রকল্পের কাজে বিঘেœর সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর তড়িৎ হস্তক্ষেপের ফলে সকল বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে দ্রæত বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
প্রকল্প পরিচালক ও পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের অধিনে অফিস ভবন, ব্রহ্মপুত্রের নদী শাসন বাঁধ, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সোলার প্লেট বসানো, দশটি বক্স ট্রান্সমিশনে সংযোগ প্রদান, সাব-স্টেশনসহ ১৩২ কেভিএ ট্রান্সমিশন টাওয়ার নির্মাণ, কেওয়াটখালীস্থ জাতীয় গ্রীড লাইন পর্যন্ত চার কিলোমিটার আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন এবং এক কিলোমিটার ওভারহেড ট্রান্সমিশন সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ইকুইপমেন্ট টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের পর পরীক্ষামূলক সৌরবিদ্যুত উৎপাদন শুরু এবং গ্রিডে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত যুক্ত হবে বলে জানান তিনি।
এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ মো. শফিকুল ইসলাম পিএসসি জানান, সরকারের সব নিয়মনীতি অনুসরণ করে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশে চলমান সৌরবিদ্যুত প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় ও মেগা প্রকল্প। পরিবেশবান্ধব এই বিদ্যুত প্রকল্পের সাথে জড়িত চীনা প্রকৌশলীরা জানুয়ারীতে বর্ষবরণ করতে দেশে যাওয়ার পর করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের ফিরতে দেরি হওয়ায় সৌরবিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে বিলম্বিত হয়। করোনা মহামারি না থাকলে আরো ৬ মাস আগেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হতো। তিনি জানান, প্রকল্পটির কারণে স্থানীয়ভাবে অনেক মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পের সুফল পাবে ময়মনসিংহের মানুষ। কয়েকশ’ মানুষ এখানে কাজ করেছেন। আশপাশের জমির মূল্য বেড়ে গেছে। সরকারের দেয়া বর্ধিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রকল্পটি সৌরবিদ্যুত উৎপাদানে মাইলফলক হয়ে থাকবে। ##