স্বামী রফিকুল ইসলামকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ওয়্যারড্রবে ঢুকিয়ে রাখার অভিযোগে দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় স্ত্রী জীবন্নাহারকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ তাফসিরুল ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার উলামাকান্দি এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে মারিয়া আক্তার রোজা নামের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। রোজা বেশিরভাগ সময়ই তার নানির বাড়ি থাকতো। ঘটনার দিন রোজা বাসায় ছিল না।
জানা যায়, ‘২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলার চালায় জীবন্নাহার তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। প্রথমে তার স্বামীকে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যা করার পর লাশটিকে ওয়্যারড্রবে ঢুকিয়ে রাখে। এরপর ওই নারী পরদিন লাশটিকে বের করে দুটি পা কাটে, দুটি হাত কাটে এবং মাথা কেটে আলাদা করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়। এ মামলায় জামিন আবেদন করা হলেও হাইকোর্ট জীবন্নাহারকে জামিন দেননি।’
এদিকে ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি দুপুরে গাজীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জীবন্নাহার তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে খুনের বর্ণনা দেন।
গাজীপুর পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, চাকরির সুবাদে স্বামী রফিকুল ইসলাম জীবন্নাহারকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মেঘনা কারখানার সীমানা প্রাচীরের পাশে গিলারচালা এলাকার আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। রফিকুল স্থানীয় ‘হাউ আর ইউ’ টেক্সটাইল কারখানায় লোডার পদে এবং স্ত্রী স্থানীয় মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় সুইং অপারেটর পদে চাকরি করতেন। স্বামী বেতন পেতেন সাত হাজার টাকা, আর স্ত্রী বেতন পেতেন ১৩ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময় স্ত্রীর বেতনের টাকা স্বামী তার কাছে দিতে বলতেন। কিন্তু জীবন্নাহার বেতনের টাকা তার কাছে না দিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। এরই ধারাবাহিকতায় স্ত্রী জীবন্নাহার স্বামী রফিকুলকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথাকাটাকাটি হয় এবং একপর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরে স্বামী খাটে শুয়ে থাকেন। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগে জীবন্নাহার ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করে। এতে খাট থেকে নিচে পড়ে যান রফিকুল। এরপর উপর্যুপরি ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে অচেতন হয়ে পড়েন রফিকুল ইসলাম। একপর্যায়ে গামছা দিয়ে স্বামীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ঘরে থাকা ওয়্যারড্রবে মরদেহ লুকিয়ে রেখে জীবন্নাহার কারখানায় চলে যান। পরে কারখানা থেকে রাতে বাসায় ফিরে মরদেহটি ওয়্যারড্রব থেকে বের করে বঁটি দিয়ে দুই হাত কনুই থেকে, দুই পা হাঁটু থেকে এবং ঘাড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে মাথা-হাত-পা বিচ্ছিন্ন দেহাংশটি বস্তায় ভরে পাশের বাঁশঝাড়ে, পা দু’টি অদূরে টয়লেটের পাশে এবং মাথা, দুই হাতের অংশগুলো ময়লার ড্রেনে ফেলে দেয়।
পরদিন সকালে এলাকাবাসী বাঁশঝাড়ের নিচে রক্তমাখা বস্তা ও মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে দুপুরে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার এবং জীবন্নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদকালে জীবন্নাহার খুনের ঘটনা স্বীকার করেন। ওই হত্যাকাণ্ডের পর রফিকুলের বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে জীবন্নাহারকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। সে মামলায় আটক জীবন্নাহারকে গ্রেফতার দেখানো হয়।